PRC Foundation
The best way of learning and gaining
Suggestion
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
History of Emergence of Independent Bangladesh
Exam- 2020
গ-বিভাগ
- বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো ।
- উপনিবেশিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব বিকাশ ও এর ফলাফল ব্যাখ্যা করো ।
- অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল কেন?
- লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল এ প্রস্তাবের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
- 1966 সালের 6 দফা কর্মসূচি ব্যাখ্যা কর ।
- 1969 সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য আলোচনা কর ।
- মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা করো ।
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখ ।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে 1970 সালের নির্বাচন কি প্রভাব রেখেছিল ।
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা আলোচনা করো ।
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান আলোচনা করো ।
- 1940 সালের লাহোর প্রস্তাব ব্যাখ্যা করো ।
খ-বিভাগ
- বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা করো।
- অখন্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
- পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বিবরণ দাও।
- যুক্তফ্রন্ট সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণ কি ছিল।
- ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের কর্মসূচি কি ছিল?
- বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে টীকা লিখ।
- মহান মুক্তিযুদ্ধে যেকোনো দুইটি সেক্টর সম্পর্কে আলোচনা করো।
- বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে লিখ।
- ধর্মীয় সহনশীলতা বলতে কি বুঝ?
- আমাদের জাতীয় জীবনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
- যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি আলোচনা করো।
- সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সমূহ উল্লেখ করো।
- সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে কি বুঝ।
- বসু সোহরাওয়ার্দী চুক্তি কি?
ক – বিভাগ
প্রশ্ন ১৯৪৭ সালে কতটি প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তর: চারটি
প্রশ্ন পাকিস্তানের শতকরা কত জনের মাতৃভাষা বাংলা ছিল।
উত্তর: ৫৬.৪০ percent
প্রশ্ন ১৯৬২ সালে ৬ দফা দাবি পেশ করেন কে?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
প্রশ্ন NDF এর পূর্ণরূপ কি
উত্তর: National Democratic Front
প্রশ্ন বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ কোনটি
উত্তর : তাজিংডং বা বিজয়
প্রশ্ন দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা কে
উত্তর: কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
প্রশ্ন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির প্রধান কে ছিলেন
উত্তর: ডা. কামাল হোসেন
প্রশ্ন আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন
উত্তর: মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
প্রশ্ন কার নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয়েছিল
উত্তর: অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে।
প্রশ্ন বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম কি
উত্তর: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
প্রশ্ন ছয় দফা কত সালে ও কোথায় উত্থাপিত হয়।
উত্তর: ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, লাহোরে।
প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন সেক্টরে কোনো সেক্টর কমান্ডার ছিল না
উত্তর:১০ নম্বর সেক্টরে
প্রশ্ন কত তারিখে বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন
উত্তর:১৯২০ সালের ১৭ মার্চ
প্রশ্ন ২৫ মার্চের কাল রাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত অভিযানের নাম কি?
উত্তর: অপারেশন সার্চলাইট।
প্রশ্ন বাংলাদেশের দুজন মহিলা বীর প্রতীকের নাম কি
উত্তর: তারামন বিবি ও সেতারা বেগম।
বাংলা ভাষার আদি নিদর্শনের নাম কি?
উত্তর: চর্যাপদ।
প্রশ্ন অখন্ড বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: শেরে বাংলা এ.কে . ফজলুল হক।
প্রশ্ন ভারত স্বাধীনতা আইন কত সালে প্রণীত হয়
উত্তর: ১৯৪৭ সালে।
প্রশ্ন পাকিস্তানের প্রথম কত সালে সামরিক শাসন জারি হয়?
উত্তর: ১৯৫৮ সালে।
প্রশ্ন মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশ কে জারি করেন?
উত্তর: ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান।
প্রশ্ন L.F.O এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর: Legal Framework Order.
প্রশ্ন কোন কর্মসূচিকে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়।
উত্তর: ছয় দফা কর্মসূচিকে।
প্রশ্ন কার নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়?
উত্তর: শেরে বাংলা এ.কে . ফজলুল হকের নেতৃত্বে।
প্রশ্ন ২৫ মার্চের গণহত্যার সাংকেতিক নাম কি?
উত্তর: অপারেশন সার্চলাইট।
প্রশ্ন শেখ মুজিবুর রহমানকে কবে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়?
উত্তর: ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি।
প্রশ্ন বঙ্গ নামটি কোন গ্রন্থে সর্বপ্রথম পাওয়া যায়?
উত্তর: ঐতেরয় আরণ্যক নামক গ্রন্থে।
প্রশ্ন বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কোন ভৌগলিক রেখা অতিক্রম করেছে?
উত্তর: কর্কটক্রান্তি রেখা।
প্রশ্ন লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন?
উত্তর: শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক।
প্রশ্ন কত সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়
উত্তর: ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ।
প্রশ্ন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক কি ছিল?
উত্তর: নৌকা ।
প্রশ্ন শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন?
উত্তর: কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের।
প্রশ্ন পাকিস্তানের প্রধান সংবিধান কোন সালে রচিত হয়
উত্তর: ১৯৫৬ সালে।
প্রশ্ন আওয়ামী শব্দের অর্থ কি
উত্তর: জনগণ।
প্রশ্ন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: আতাউল গনি ওসমানী।
প্রশ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা সর্বপ্রথম কখন উত্তোলন করা হয়?
উত্তর: ২ মার্চ ১৯৭১ সালে।
প্রশ্ন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব কি?
উত্তর: বীরশ্রেষ্ঠ।
প্রশ্ন ডা.শামসুজ্জোহা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন?
উত্তর: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের।
প্রশ্ন বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোনটি?
উত্তর: চাকমা।
প্রশ্ন দ্বিজাতিতত্ত্বে কোন দুইটি জাতের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: হিন্দু ও মুসলমান।
প্রশ্ন অখন্ড বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
প্রশ্ন যুক্তফ্রন্ট কতটি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ৪ টি ।
প্রশ্ন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল ?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু সহ ৩৫ জন।
প্রশ্ন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার খবর কোন সাংবাদিক সর্বপ্রথম বহির্বিশ্বে প্রকাশ করেন?
উত্তর: সাংবাদিক সায়মন ড্রিং।
প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধে গঠিত ১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারদের নাম লিখ?
উত্তর: মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর রফিকুল ইসলাম।
প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কোন কারাগারে বন্দি ছিলেন?
উত্তর: পাকিস্তানের মিয়াওয়ালী কারাগার।
প্রশ্ন বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম দেশ কোনটি?
উত্তর: ভুটান।
প্রশ্ন ১৯৭২ সালের সংবিধানে কতটি অনুচ্ছেদ ছিল?
উত্তর: ১৫৩ টি ।
প্রশ্ন বাংলাদেশ কবে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে?
উত্তর: ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর।
প্রশ্ন মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশ কবে জারি করা হয়?
উত্তর: ১৯৫৯ সালের ২৭ অক্টোবর।
প্রশ্ন বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯১১সালে।
প্রশ্ন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম কোথায় উত্তোলন করা হয়?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়।
প্রশ্ন বাংলাদেশের সংবিধান কত তারিখ থেকে কার্যকর হয়েছে?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
প্রশ্ন ১৯৭১ সালের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন
উত্তর: সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
প্রশ্ন “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু” প্রবন্ধ টির রচয়িতা কে?
উত্তর: তমুদ্দিন মজলিস এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেম ।(প্রকৃতপক্ষে এটি তমুদ্দিন মজলিস কর্তৃক প্রচারিত একটি পুস্তিকা)।
প্রশ্ন পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন কে?
উত্তর: ইস্কান্দার মির্জা।
প্রশ্ন বাংলাদেশ নামকরন কে কখন করেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে।
প্রশ্ন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস কত তারিখ?
উত্তর: বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস যথাক্রমে ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর।
প্রশ্ন রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম কি
উত্তর: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
প্রশ্ন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কোথায় ছিল
উত্তর: চট্টগ্রামের কালুরঘাটে।
প্রশ্ন ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি….” এখানে তিনি কি আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন?
উত্তর: বন্দিত্ব অথবা মৃত্যু।
প্রশ্ন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রামে পাকিস্থানীদের অস্ত্র বহনকারী জাহাজ টির নাম কি ছিল?
উত্তর: সোয়াত।
প্রশ্ন ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেরবর্তমানে কোন শ্রেণীর পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর: উচ্চ মাধ্যমিক।
প্রশ্ন কত তারিখে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়?
উত্তর: ১৯৭১সালের ১০ এপ্রিল ।
প্রশ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কোন উক্তির মাধ্যমে সমাপ্ত করেছিলেন?
উত্তর: জয় বাংলা।
প্রশ্ন আত্মসমর্পণ দলিলে কে কে স্বাক্ষর করেন।
উত্তর: পাকিস্তানের পক্ষে জেনারেল নিয়াজী ও মিত্রবাহিনীর পক্ষে জগজিৎ সিং অরোরা।
প্রশ্ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা কত ?
উত্তর: ২০০ নটিক্যাল মাইল।
প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়?
উত্তর: ১১ টি সেক্টরে।
প্রশ্ন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত “Concert for Bangladesh” এর কোন গায়ক সম্প্রতি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন।
উত্তর: Bob Dylan.
প্রশ্ন লাহোর প্রস্তাব কত সালে ঘোষণা করা হয়
উত্তর: ১৯৪০ সালে।
প্রশ্ন গণঅভ্যুত্থান কত সালে হয়?
উত্তর: ১৯৬৯ সালে।
প্রশ্ন কত তারিখে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়?
উত্তর: ১৯১১ সালের ১২ডিসেম্বর।
প্রশ্ন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ কতটি আসনে জয়লাভ করে?
উত্তর: ১৬৭ টি আসন।
প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কে ছিলেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন বাংলাদেশের বৃহত্তম পাহাড় কোনটি?
উত্তর: গারো পাহাড়।
প্রশ্ন বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে কোন ভাষা গোষ্ঠী থেকে?
উত্তর: ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকে।
প্রশ্ন সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কবে গঠিত হয়?
উত্তর: ২ মার্চ ১৯৪৮ সালে।
প্রশ্ন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় কবে ?
উত্তর: ৪ জানুয়ারি ১৯৪৮ ।
প্রশ্ন PODO এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর :Public Office Disqualification Order .
প্রশ্ন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ আসাদ কবে নিহত হয়?
উত্তর: ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে।
প্রশ্ন ১৯৭০ সালে নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে ছিলেন?
উত্তর: কে. এম.নুরুল হুদা।
প্রশ্ন মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী কে ছিলেন।
উত্তর: এম . মনসুর আলী।
প্রশ্ন বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী কবে গঠিত হয়?
উত্তর: ২৯নভেম্বর ১৯৭১ সালে।
প্রশ্ন বাংলাদেশ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করে কবে
উত্তর: ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে।
প্রশ্ন পদ্মা নদী কোথায় মেঘনার নদীর সাথে মিলিত হয়েছে?
উত্তর: চাঁদপুরের নিকট গোয়ালন্দে।
প্রশ্ন EBDO এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর: Elective Bodies Disqualification Order.
প্রশ্ন ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ গভর্নর কে?
উত্তর: লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
প্রশ্ন কখন সংবিধানে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়?
উত্তর: ১৯৫৬ সালে।
প্রশ্ন আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
প্রশ্ন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় কত সালে?
উত্তর: ১ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে।
প্রশ্ন ভাষা আন্দোলনের দুজন শহীদের নাম লিখ?
উত্তর: সালাম, বরকত।
প্রশ্ন কে সর্বপ্রথম বাংলাকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব রাখেন?
উত্তর: কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
প্রশ্ন যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার প্রথম দফা কি ছিল?
উত্তর: বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা।
প্রশ্ন বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে কোন ভাষা থেকে?
উত্তর: মাগধী প্রাকৃত থেকে।
প্রশ্ন “আইনগত কাঠামো আদেশ” কে জারি করে?
উত্তর: ইয়াহিয়া খান।
প্রশ্ন আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কে ছিলেন
উত্তর: মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
প্রশ্ন ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন কোন শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে ছিল?
উত্তর: হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন।
প্রশ্ন বঙ্গবন্ধু কে কত তারিখে সপরিবারে নিহত করা হয়?
উত্তর: ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে।
প্রশ্ন মৌলিক গণতন্ত্রের সর্বনিম্ন স্তর কোনটি?
উত্তর: ইউনিয়ন কাউন্সিল।
প্রশ্ন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় কে “Prophet of violence ” হিসেবে পরিচিতি পায় ?
উত্তর: মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
প্রশ্ন DAC কী ?
উত্তর: নবাবজাদা নসরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে গঠিত একটি আইয়ুব বিরোধী দল।
প্রশ্ন অপারেশন বিগ বার্ড কি?
উত্তর: পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের অপারেশন টির নাম ছিল অপারেশন বিগ বার্ড।
প্রশ্ন কে বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেন?
উত্তর: ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে আ.স.ম .আব্দুর রব।
প্রশ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোন ভাষণ এর ফলে অসহযোগ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে?
উত্তর: ৭ই মার্চের ভাষণ।
প্রশ্ন পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর: রাজা গোপাল।
প্রশ্ন ইতিহাস শব্দের আভিধানিক অর্থ কি?
উত্তর: সত্যানুসন্ধান।
প্রশ্ন বেঙ্গল প্যাক্ট কত সালে হয়?
উত্তর: ১৯২৩ সালে।
প্রশ্ন কত সালে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
উত্তর: ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে।
প্রশ্ন দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তক কে ছিলেন?
উত্তর: লর্ড ক্লাইভ।
প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা কত নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল?
উত্তর: ২ নং সেক্টরের।
প্রশ্ন আইন-ই-আকবরী গ্রন্থের রচিয়তা কে?
উত্তর: আকবরের প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল ইবন মুবারক।
প্রশ্ন লখনৌ চুক্তি কত সালে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর: ১৯১৬ সালে।
প্রশ্ন কত সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হয়?
উত্তর: ১৮৮৫ সালে।
প্রশ্ন ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপন করেন কে?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন ভূ-প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর: ৩ ভাগে।
প্রশ্ন অখন্ড বাংলা আন্দোলনের উদ্যোক্তা কে?
উত্তর: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
প্রশ্ন ১৯৭১সালের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: তাজউদ্দিন আহমেদ।
প্রশ্ন যুক্তফ্রন্ট গঠন হয় কখন?
উত্তর: ১৯৫৩ সালে ৪ ডিসেম্বর।
প্রশ্ন ১৯৭১ সালের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
খ-বিভাগ
1.বাঙালি সংকর জাতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো।
ভূমিকা: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন বৈচিত্র্যময়। বাঙালি জাতিও তেমনি বৈচিত্র্যময়। প্রাচীন কাল হতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এদেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস করায় বাঙালি জাতি এক বৈচিত্র্যময় জাতিতে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নীহাররঞ্জন রায় বলেন, “ বাঙালি সংকর জাতি”। বাঙালি যে সংকর জাতি তা নিচে আলোচনা করা হলো।
সংকর জাতি: দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর একই সাথে বসবাস করার ফলে বাঙালি জাতি প্রায় সকল জাতির বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত একটি নতুন জাতিতে পরিণত হয়েছে। এইজন্য বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি বলা হয়। যেসব জাতির সংমিশ্রণে বাঙালি জাতি শংকর জাতিতে পরিণত হয়েছে । সেগুলো পর্যায়ক্রমে ব্যাখ্যা করা হলো।
বাংলার আদি মানব গোষ্ঠী: বাঙালি জাতির আদি মানব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া খুব কষ্টকর তবুও বাংলার পূর্ব পশ্চিম সীমান্তে প্রস্তর যুগের এবং তাম্র যুগের নিদর্শন থেকে ধারণা করা যায় যে এসব অঞ্চলে বসবাসকারী মানব গোষ্ঠী বাংলার আদি মানব। যা পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
অনার্য নরগোষ্ঠী: ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে বাংলার আদি মানব গোষ্ঠী দুই ভাগে বিভক্ত অনার্য নরগোষ্ঠী এবং আর্য নরগোষ্ঠী। অনার্য নরগোষ্ঠীর উৎপত্তি হয় আম্বিক, দ্রাবিড়, আল্পীয়, মঙ্গোলীয় এবং নেগ্রিটো ও আরো কিছু জাতির সংমিশ্রণে।
নেগ্রিটো: বাঙালি জাতি গোষ্ঠীর প্রথম পুরুষ গান ছিল নেগ্রিটো দের অন্তর্ভুক্ত। এরা দেখতে অনেকটা খাটো বেটে পৌর এ জাতির বৈশিষ্ট্য এখনো বাঙ্গালীদের মধ্যে বিদ্যমান। সুতরাং বলা যায় যে বাঙালি জাতি একটি সংকর জাতি।
দ্রাবিড় জাতি: দ্রাবিড় জাতি আনুমানিক ৫ হাজার বছর পূর্ব থেকেই বাংলায় বসবাস করে এবং বাঙালি জাতির প্রধান অংশ দাবির জাতি থেকে গড়ে উঠেছে।
অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েড জাতি: সাঁওতাল , কোল, মুন্ডা, মাল্পাহারি প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে অস্ট্রিক জাতি গঠিত হয় এবং বাঙ্গালীদের মধ্যেও এই জাতিগোষ্ঠীর প্রাধান্য লক্ষনীয় যার ফলে বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি বলা হয়।
মঙ্গলয়েড জাতি: বাঙালি জাতি সংকর জাতি হওয়ার জন্য মঙ্গলয়েড জাতির অবদান লক্ষনীয়। বাংলার পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের মধ্যে মঙ্গোলয়েড জাতি গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় । বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজাতি যেমন গারো, চাকমা, মনিপুরী ইত্যাদি উপজাতিদের অন্তর্ভুক্ত।
আরব জাতি: বাংলা ছিল প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র ১২০৪ সালে বক্তিয়ার খিলজি কর্তৃক বাংলা বিষয়ের পরে আরও প্রায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বসতি স্থাপন করে এভাবে বাঙালি জাতির সাথে আরব জাতির সংমিশ্রন ঘটে।
ইউরোপীয় জাতি: ১৬ শতকে শতকে ইউরোপীয় জাতি ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাংলায় আগমন করেন যাদের অনেকেই বাংলায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছে এবং বাঙালি জাতিসত্ত্বার সাথে মিশে গিয়েছে এভাবেই বাঙালি নতুন একটি সংকর জাতি তে পরিণত হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয় যে,
” কেহ নাহি জানে কার আহবানে
কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে
সমুদ্রের হলো হারা”
2.অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের উদ্যোগ ব্যাখ্যা করো।
ভূমিকাঃ সৃষ্টিলগ্ন থেকেই ভারত কখনোই একটিমাত্র রাষ্ট্র ছিল না। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র প্রভৃতির কারণে ভারতবাসীদের মধ্যে বিভিন্নতা ছিল। জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিভিন্নতার কারণে ভারতে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ছিল। সম্ভাবনাময় জাতি হিসেবে বাঙালিরা ছিল অন্যতম।
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তিকরণ সফল হবার ঠিক প্রাক্কালে তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ২৭ এপ্রিল দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেন যা ছিল স্বাধীন সার্বভৌম অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রস্তাব।
বসু-সোহরাওয়ার্দী চুক্তি: ১৯৪৭ সালের ২০ মে শরৎচন্দ্র বসুর কোলকাতার ১নং উডবার্ন বাসভবনে মুসলিমলীগ ও কংগ্রেস নেতাদের মধ্যকার এক সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়। মুসলিমলীগের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী, ফজলুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, আবুল হাশিম ও এ এম মালিক এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্ৰ বসু, কিরণ শংকর রায় ও সত্তরঞ্জন বখশী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাক্রমে তারা সকলে একমত হয়ে স্বাধীন অখন্ড বৃহত্তর বাংলা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। মুসলিম লীগের হয়ে আবুল হাশিম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্র বসু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির ধারা বা বৈশিষ্ট্য:
i.বাংলা হবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এর নিজের মঙ্গল-অমঙ্গল, অন্যান্য রাষ্ট্র বা অংশের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ- সবকিছুই সে নিজে ঠিক করবে।
ii.হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাতের উপর ভিত্তি করে আসন সংখ্যা বন্টন করে আইন সভার নির্বাচন হবে। উক্ত নির্বাচনে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। হিন্দু ও তফশিলি হিন্দুদের মধ্যে আসন বন্টন হবে উভয়ের সম্মতিক্রমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অথবা জনসংখ্যার অনুপাতে। একাধিক প্রার্থী হলে ভোট হবে নির্বাচনমূলক ও বন্টণধর্মী এবং সর্বোচ্চ আসন সংখ্যাভিত্তিক হবে না। কোনো প্রার্থী যদি নিজ সম্প্রদায় হতে সর্বোচ্চ ভোট এবং অন্য সম্প্রদায় হতে ২৫% ভোট পায় তবে সে নির্বাচিত বলে গণ্য হবে। এর অন্যথা হলে যে তার সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তাকে নির্বাচিত করা হবে।
iii.স্বাধীন বাংলার এই চুক্তি ব্রিটিশ সরকার মেনে নিলে, অর্থাৎ বাংলা বিভক্ত না হলে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে যেখানে প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত সমসংখ্যক হিন্দু ও মুসলমান সদস্য থাকবে। মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হবে একজন মুসলমান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবে একজন হিন্দু।
iv.অবিভক্ত বাংলার নতুন সংবিধান ও মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত সামরিক বাহিনী ও পুলিশের চাকরিতে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই চাকরি পাবার সমান সুযোগ পাবে। এসকল চাকরিতে শুধুমাত্র বাঙালিরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।
v.ইউরোপীয় সম্প্রদায় বাদ দিয়ে নতুন বঙ্গীয় আইন সভায় এমন একটি সংবিধান পরিষদ গঠন করা হবে যেখানে মুসলমান সদস্য হিসেবে ১৬ জন মুসলমান এবং অমুসলমান সদস্য হিসেবে ১৪ জন হিন্দু থাকবে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। যদিও পরবর্তীতে মোঘল ও ব্রিটিশ আমলে বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ১৯৪৭ সালে সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক গৃহিত অখন্ড বাংলা আন্দোলনে স্মরণকালের অন্যতম মহান উদ্যোগ গুলোর একটি। তার এই মহান উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও এই উদ্যোগের কারণেই তিনি আজ অব্দি বাংলার মানুষের কাছে প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।
3.পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য ব্যাখ্যা করো।
ভূমিকা: পাকিস্তান রাষ্ট্রের সূচনা লগ্ন থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক , বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। এ অর্থনৈতিক বৈষম্য এক পর্যায়ে গগনচুম্বী আকার ধারণ করে।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য: তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে আমরা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি সুস্পষ্ট চিত্র দেখতে নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
অর্থনৈতিক বরাদ্দে বৈষম্য: তৎকালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার 56% পূর্ববাংলায় বসবাস করলেও জাতীয় অর্থনৈতিক বাজেটের 75% অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হত। পাকিস্তান শাসনামলে তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী মাত্র 37 শতাংশ , দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকীর মোট বরাদ্দের মাত্র 21.9 শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানের এবং 78.1 শতাংশ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয়।
রাজস্ব আয় ব্যয়ে বৈষম্য: রাজস্ব আয় ব্যয়ের ক্ষেত্রেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।1965 – 1969 সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান বিভিন্ন শুল্ক খাত থেকে আয়কৃত 728 কোটি টাকা কেন্দ্রে জমা দেয় এবং কেন্দ্র 485 কোটি টাকা পূর্ব পাকিস্তান খরচের জন্য পায় । পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তান 17 81.7 কোটি টাকা কেন্দ্রে জমা দিয়ে 16 59.5 কোটি টাকা খরচের জন্য পায় রেটি অর্থনৈতিক বৈষম্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য : শিল্পায়নের ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।1949- 1950 অর্থবছরে শিল্প ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান শিল্পক্ষেত্রেদেশের মোট উৎপাদনেরউৎপাদনের 94.4 শতাংশ আয় করে কিন্তু হাজার 1964 – 1970 এই উৎপাদনের হার গিয়ে দাঁড়ায় মোট উৎপাদনের মাত্র 20 শতাংশে। পক্ষান্তরে ঊনপঞ্চাস পঞ্চাশ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্প খাতে উন্নয়নের পরিমাণ ছিল মোট উৎপাদনের 14.7 শতাংশ কিন্তু 1970গিয়ে দাঁড়ায় মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশে।
বৈদেশিক অনুদানের ক্ষেত্রে পার্থক্য: 1965 সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র চিনতে কে60 মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য পেলে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য মাত্র পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়নের জন্য 1,25,000 খরচ হয় এবং এর অবশিষ্ট অংশ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে
ব্যয় হয়।
চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য: পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে চাকরির ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় বিমান, সেনা, নৌ বাহিনীর সদর দপ্তর গুলো ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে পক্ষান্তরে পূর্ব পাকিস্তান ছিল সদরদপ্তর শুন্যু।এমনিভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক এবং বেসামরিক খাতে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।
কৃষি ক্ষেত্রে বৈষম্য: কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য দেখা দেয় যেমন -1964 -65 সালে সরকার কৃষি ক্ষেত্রে 1,060.93কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও পূর্ব পাকিস্তান মাত্র 20 7.96 কোটি টাকা পায় যা কৃষি উন্নয়নে বৈষম্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এছাড়াও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান ছিল। যেমন রপ্তানি, বিদ্যুৎ, সম্পদ বিভাজন, বিদ্যুতায়ন, চাকরি, মাথাপিছু ব্যয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে,অর্থলোভী স্বার্থন্বেষী স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা বাঙালিরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার হয়নি বরং সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রেই শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়েছিল।
4.যুক্তফ্রন্ট সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
ভূমিকা: পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতি ও পূর্ব বাংলার তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের যুক্তফ্রন্ট গঠন ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করে বাঙালি অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ মিল প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি জোট গঠন করে। আর এই জোটই যুক্তফ্রন্ট নামে পরিচিত।
যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রেক্ষাপট: মুসলিম লীগ ছিল পাকিস্তানের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক এবং খাজা নাজিমুদ্দিন। 1937 ও ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে শেরে বাংলা এবং সোহরাওয়ার্দীর অবদান ছিল অধিক। নাজিমুদ্দিনের অবস্থান ছিল অনেক নিচে। তথাপি গণতান্ত্রিক মূল ধারার তোয়াক্কা না করে নাজিমুদ্দিন মুখ্যমন্ত্রী হন। এই ঘটনার প্রতিবাদ করে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক।শেষ পর্যন্ত তিনি দল ত্যাগ করেন এবং নতুন দল গঠন করেন।
যুক্তফ্রন্ট গঠন: ১৯৫৩ সালের মে মাসে ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে ১৯৫৩সালের ৪ ডিসেম্বর কয়েকটি বিরোধী দলের সমন্বয়ে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
যুক্তফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত দলসমূহ:
যুক্তফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত দল সমূহের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
1. আওয়ামী মুসলিম লীগ – মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন।
2. কৃষক শ্রমিক পার্টি – শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন।
3. নেজামে ইসলাম – মাওলানা আতহার আলী নেতৃত্বাধীন।
4. গণতান্ত্রিক দল – হাজী মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বাধীন।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সহ মোট ১৬ টি দল নির্বাচনে’ অংশ নেয়। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লীগের মধ্যে।যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে।
যুক্তফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ: যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন বাংলার তিন প্রবীণ নেতা- শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তরুণদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
যুক্তফ্রন্টের 21 দফা কর্মসূচি: যুক্তফ্রন্ট জনগণের সামনে তাদের 21 দফা কর্মসূচি প্রকাশ করে।এতে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি, জমিদারি প্রথা বাতিল, পাট শিল্প জাতীয়করণ, সমবায় ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা দান অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন বিষয় এই যুক্তফ্রন্টের 21 দফা নির্বাচনী ইশতেহার এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
1954 সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভ: 1954 সালের নির্বাচনে মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য আলাদা আসন ছিল। পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের নির্বাচনে 309 আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট 236 আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে অপরদিকে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র 9 টি আসন পায়। বাকি আসনে স্বতন্ত্র সহ অন্যান্য দল বিজয়ী হয়। যুক্তফ্রন্টের এ বিজয়কে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা “ব্যালট বিপ্লব” বলে আখ্যায়িত করে।
উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ১৯৫৪সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট গঠন ছিল একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দূরদর্শিতার প্রমাণ বহন করে।
5.আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণ।
ভূমিকা: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাঙালির জাতীয় জীবনের এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা। 1968 সালে শেখ মুজিবুর রহমান সহ মোট 35 জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইয়ুব খান মামলা দায়ের করেন ইতিহাসে এটাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই মামলার শিরোনাম ছিল “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য”। আইয়ুব সরকার এই মামলায় 100 টি অভিযোগ উত্থাপন করে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণ: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পিছনে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী কতিপয় যৌক্তিকতা উল্লেখ করে। কিন্তু এগুলো সবই ছিলো মিথ্যা বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর। নিম্নে আগরতলা মামলার কারণ গুলো আলোচনা করা হলো:
ছয় দফা আন্দোলনকে দমানো: আগরতলা মামলার অন্যতম কারণ হলো 1966 সালের শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মসূচীভিত্তিক ছয় দফা আন্দোলনকে দমন করা। পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার ছয় দফা দাবিকে দুর্বল করার জন্য নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
মৌলিক গণতন্ত্র: মৌলিক গণতন্ত্র নামে উদ্ভট এ কৌশলের আবিষ্কারক ছিলেন আইয়ুব খান। এটা না ছিল মৌলিক, না ছিল গণতন্ত্র। এককথায় গণতন্ত্রের আড়ালে এক ধরনের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এর বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাই তার বিরুদ্ধে আইয়ুব খান বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল: আইয়ুব খান নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য আগরতলা মামলা দায়ের করে। এই মামলা দায়ের করার মাধ্যমে তিনি তার ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করতে চেয়ে ছিলেন।
গণ আন্দোলন দমন: পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দাবিতে আন্দোলন করেছিল। আইয়ুব সরকার গণ আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য আগরতলা মামলা দায়ের করে।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা: 1954 সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর এর ভূমিকা ছিল সর্বাধিক অগ্রগণ্য। এই নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনীতি হতে মুসলিম লীগের বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিলো। আর তাই মুসলিম লীগ সমর্থিত সরকার বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেছিল।
পূর্ব পাকিস্তানকে নেতাশূন্য করা: নেতাবিহীন বিরোধী দল হয়তো বেশি দিন টিকবে না। আইয়ুব সরকার সরকার তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নেতাদের দুর্বল করতে চেয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তান নেতাশূন্য হলে পাকিস্তান সরকার কোন চাপের মুখে পড়বে না। ফলে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব। তাই তারা কৌশলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে।
স্বায়ত্তশাসনের দাবি নস্যাৎ করা: পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন লাভ করা। স্বায়ত্তশাসনের দাবি নস্যাৎ করার জন্যই আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়াও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আরো অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা, বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই নস্যাৎ করা, আইয়ুব সরকারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা, জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর, সর্ব ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করা ইত্যাদি কারণে আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আইয়ুব খান যে কারণে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেছিলেন তা সফল হয়নি বরং এর ফল হয়েছিল উল্টো।কেননা এই মামলার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানের কারণে আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
6.ছাত্রদের 11 দফা আন্দোলনের কর্মসূচি আলোচনা করো
ভূমিকা: 1969 সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের 11 দফা ভিত্তিক আন্দোলন বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই 11 দফা ছিল ছাত্র সমাজের গৃহীত রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি।
ছাত্রদের 11 দফা আন্দোলন: 1969 সালের 4 জানুয়ারি ডাকসু কার্যালয়ে ছাত্রলীগ,ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া ও মেনন উভয় গ্রুপ) ও জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ(দোলন) সাংবাদিক সম্মেলন করে 11 দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। ছাত্রদের 11 দফা আন্দোলনকে শেখ মুজিবুর রহমান সমর্থন করে। যার ফলে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায় ।
ছাত্রদের 11 দফা কর্মসূচি: স্বৈরাচারী সরকারের দীর্ঘদিনের শাসন-শোষণে অতিষ্ঠ হয়ে ছাত্র-জনতা ছাত্র আন্দোলন শুরু করে এবং 11 দফা দাবি জানায়। নিচে ছাত্রদের 11 দফা দাবি গুলো আলোচনা করা হলো:
শিক্ষা সমস্যার সমাধান: শিক্ষা সমস্যার আশু সমাধান করতে হবে। অর্থাৎ হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত আইন বাতিল করতে হবে। এবং ছাত্রদের বেতন ও অন্যান্য ফি কমিয়ে শিক্ষার ব্যয় সংকোচন করতে হবে।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা: প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে হবে। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি: ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বায়ত্বশাসন প্রদান করতে হবে।
পশ্চিম পাকিস্তানে সাব-ফেডারেশন গঠন করতে হবে: পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রদেশগুলোকে(অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিমপ্রদেশ,বেলুচিস্তান,পাঞ্জাব,সিন্ধু)স্বায়ত্শাসন দিয়ে একটি ফেডারেল সরকার গঠন করতে হবে।
বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হবে: ব্যাংক-বীমা ও পাটকল সহ সকল প্রকার বৃহৎ শিল্পের জাতীয়করণ করতে হবে।
কৃষকের খাজনা-ট্যাক্স কমাতে হবে: কৃষকের ওপর হতে খাজনা ট্যাক্সের হার কমাতে হবে এবং বকেয়া খাজনা ও ঋণ মওকুফ করতে হবে। পাটের সর্বনিম্ন মূল্য মন প্রতি 40 টাকা নির্ধারণ এবং আখের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে।
শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে: শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও বোনাস দিতে হবে এবং তাদের শিক্ষা,বাসস্থান, ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে: পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং জল সম্পদের ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।
জরুরী আইন প্রত্যাহার করতে হবে: জরুরি অবস্থাসহ জন- নিরাপত্তা আইন, জরুরী আইন ও অন্যান্য দমনমূলক আইন রহিতকরণ করতে হবে।
সকল প্রকার পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল এবং নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি কায়েম করতে হবে: সিয়াটো(SEATO), সেন্ট্রো(SENTRO) সহ সকল প্রকার পাক-মার্কিন সামরিক জোট হতে বের হয়ে আসতে হবে এবং স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি কায়েম করতে হবে।
সকল প্রকার মামলা প্রত্যাহার এবং রাজবন্দির মুক্তি: দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক সকল ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে মুক্তি, গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং আগরতলা মামলা সহ সকল রাজনৈতিক কারণে জারিকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়,1969 সালের ছাত্রসমাজের 11 দফা আন্দোলন সবদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রসমাজ কর্তৃক পরিচালিত এই আন্দোলনে সকল শ্রেণীর মানুষের দাবির কথা উল্লেখ ছিল ।
7.বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে টীকা লেখ
ভূমিকা: 1971 সালে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। স্বাধীনতার পর 1972 সালের 10 জানুয়ারি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। জীবন-মৃত্যুর ভয়ঙ্কর অধ্যায় পার হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান এ নেতার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতা পায় মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন 1972 সালের 10 জানুয়ারি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন করেন। 1971 সালের 26 মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দীর্ঘ নয় মাস তিনি পাকিস্তানের লালপুর কারাগারে আটক ছিলেন। 16 ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো। এরপরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বঙ্গবন্ধুকে 1972 সালের 8 জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। অতঃপর তিনি করাচি থেকে লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। নিম্নে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো:
বঙ্গবন্ধুর লন্ডন গমন: 1972 সালের 8 জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সকাল সাড়ে ছয়টায় লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা রেজাউল করিম যিনি বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রতিনিধি ছিলেন।এরপর তিনি ব্রিটিশ সরকারের মেহমান হিসেবে ক্লারিজে’স হোটেলে যান। সেখানে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, বিরোধী দলনেতা হারোল্ড উইলসন এবং পার্লামেন্টের অনেক সদস্যকে সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক: 8 জানুয়ারি, 10 নং ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। এই বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু 9 জানুয়ারি লন্ডন থেকে ঢাকার পথে রওনা হন।
দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত যাত্রা-বিরতি: বঙ্গবন্ধু 10 জানুয়ারি সকালে দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং সেখানে তার সংক্ষিপ্ত যাত্রা-বিরতি হয়। সেখানে রাষ্ট্রপতি ভিভি গীরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাকে স্বাগতম জানান।
দিল্লির গণসমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ: বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বঙ্গবন্ধু জনসভায় বক্তৃতা করেন। ভাষণে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন: 10 জনুয়ারি অপরাহ্ণে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানযোগে বঙ্গবন্ধু লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে বিকেল সাড়ে তিনটায় ঢাকা তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।অতি কষ্টে জাতির জনককে একটি খোলা ট্রাকে করে বিমানবন্দর থেকে সারা পথ প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্য দিয়ে রেসকোর্সে নিয়ে আসা হয়। রেসকোর্সে পৌঁছাতে ট্রাকটির প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।
স্বদেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ: বঙ্গবন্ধুর আবেগ তাড়িত কন্ঠের বক্তৃতা শুনে রেসকোর্স ময়দান স্তম্বিত নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। রেসকোর্স ময়দানের প্রতিটি কথাই ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির বীরত্বের কাহিনী। রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর অন্তর ছিল আবেগে আপ্লুত এবং চোখ ছিল আনন্দেতে প্লাবিত। তিনি অশ্রু বিজড়িত কন্ঠে বলেন,
“ভাইয়েরা আমার, লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ দানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে।…..”
তিনি তার ভাষণে ভবিষ্যত বাংলাদেশের পূর্ণগঠন কাজটিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে সম্মিলিত উদ্যোগে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান।
উপসংহার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন “ফাদার ফিগার”। যুদ্ধপরবর্তী দেশ গড়তে ও উন্নতির চাকা চালু করতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব গ্রহণ ছিল সময়ের দাবি। তাই এই মহানায়কের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর সমূহ আলোচনা করো।
ভূমিকা: ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকবাহিনীর অতর্কিত হামলা পর থেকেই ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে ওঠে। মুক্তিবাহিনীতে ছিল ইপিআর, আনসার, ছাত্র, শ্রমিক, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী ও সংগঠনের কর্মী। নগর অস্থায়ী সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ এলোমেলো ও বিক্ষিপ্ত ভাবে চলেছিল। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কৌশলপূর্ণভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয় যার মধ্যে পুরো দেশকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা বিভক্ত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর সমূহ: সুষ্ঠুভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল এম এ জি ওসমানী সমগ্রদেশের যুদ্ধক্ষেত্র কে মোট ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করেন। প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্বের জন্য একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। নিচে উল্লেখযোগ্য দুটি সেক্টরের বিবরণ দেওয়া হলো:
সেক্টর নং-1: চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনী (ফেনী নদী পর্যন্ত) কে নিয়ে ১ নম্বর সেক্টর গঠিত হয়েছিল। মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। পরে সেক্টরের দায়িত্ব মেজর মোহাম্মদ রফিকের হাতে ন্যস্ত করা হয়।
সেক্টর নং-7: দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ অঞ্চল এবং রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা নিয়ে ৭ নম্বর সেক্টর গঠিত হয়েছিল। এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর নাজমুল হক ও মেজর কাজী নুরুজ্জামান।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনীর অতর্কিত হামলার পর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। অস্থায়ী সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারিং চিফ জেনারেল এম এ জি ওসমানী কর্তৃক সমগ্র দেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্তিকরণ এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সামরিক সংগঠন সুসংগঠিত রূপ লাভ করে।
8.বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে টীকা লেখ।
ভূমিকা: বাংলাদেশের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে জন্মলাভ করা দুই-একদিনের ঘটনা নয়। দীর্ঘদিনের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়। প্রাচীনকাল থেকেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কখনো বঙ্গ-গঙ্গারিডাই, গৌড়, পুন্ড্র, ও বাঙাল দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বাংলা নামের উৎপত্তি: বহু চড়াই-উৎরাই পার করে এ অঞ্চল বাংলা নাম ধারণ করেছে। নিচে সেগুলো দেওয়া হল:
পৌরাণিক কাহিনী: পুরাণে বলা হয় অন্ধমুনির গর্ভে ৫ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল ‘বঙ্গ’। তিনি একজন শক্তিশালী রাজা ছিলেন। তার নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নাম বাংলা রাখা হয়। এছাড়াও হযরত নূহ (আ) সালামের ‘বঙ্গ’ নামে এক বংশধর ছিল। তার নাম থেকে বংশের উৎপত্তি হয় বলে ধারণা করা হয়।
চীনা ও তিব্বতি শব্দের মিল: অনেকে ‘বঙ্গ’ কে চীনা ও তিব্বতি শব্দ বলে ধারণা করেন। বঙ্গের ‘অং’ শব্দের সাথে গঙ্গা, হোয়াংহো, ইয়াংসিকিয়াং ইত্যাদির নদীর নামের মিল রয়েছে। বাংলায় যেহেতু অনেক জলাশয় রয়েছে, তাই একে বঙ্গ বলা হয়।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র: খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের বঙ্গের ‘শ্বেত স্নিগ্ধ’ স্মতি বস্ত্রের নাম উল্লেখ রয়েছে। সুকুমার সেনের মতে, অনেক তুলা উৎপাদন হতো বলে এ অঞ্চলের নাম বঙ্গ হয়েছে।
আবুল ফজলের মতামত: বিখ্যাত লেখক আবুল ফজল ‘বাঙ্গালা’ নামের ব্যাখ্যায় তার গ্রন্থে বলেন, বাঙ্গালার আদি নাম ছিল বঙ্গ। প্রাচীনকালে এখানে জলাবদ্ধতা হতো বলে রাজারা অনেক উঁচু ও প্রকাণ্ড আল নির্মাণ করতো। বঙ্গের সাথে ‘আল’ যুক্ত হয়ে ‘বাঙাল’ বা ‘বাঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
অধ্যাপক আব্দুল মমিন চৌধুরীর মতামত: অধ্যাপক আবদুল মবিন চৌধুরীর মতে, বাংলার প্রাচীন জনপদ এরমধ্যে ‘বাঙাল’ কখনো ‘বঙ্গের’ তুলনায় খ্যাতিমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তার ধারণা, ‘বাঙাল’ বঙ্গের সমুদ্রতীরবর্তী দক্ষিণভাগ ছিল। নদীমাতৃক এই ভূভাগে প্রচুর বৃষ্টি হতো, এজন্য বাংলায় আল নির্মাণ করা হতো আর এ থেকেই বাংলা নামের উৎপত্তি হয়েছে।
রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতামত: প্রাচীনকাল থেকেই বঙ্গ ও বাঙাল দুটি পৃথক দেশ ছিল। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, বাঙাল দেশের নাম হতেই কালক্রমে পুরো দেশের নাম বাংলা রাখা হয়।
ইংরেজদের ভূমিকা: ইংরেজরা যখন এ অঞ্চলে আসে তখন তারা পর্তুগিজরা বাঙ্গালা কে বেঙ্গল বলে অভিহিত করতো। যা দেশীয়দের কাছে বাংলা বলে পরিচিত।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও বাংলা নামের উৎপত্তিতে আরোও অনেক মতামত প্রচলিত থাকলেও বঙ্গ থেকেই বাংলার উৎপত্তি হয়েছে বলে অধিকাংশ ঐতিহাসিক পন্ডিত ধারণা করেন। প্রাচীনকালে বঙ্গ একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ভূভাগ ছিল। পরবর্তীতে বঙ্গের অধীনে এর পার্শ্ববর্তী অনেক এলাকা চলে আসে এবং ধীরে ধীরে পুরো অঞ্চল বাংলা নাম ধারণ করে।
9.ধর্মীয় সহনশীলতা বলতে কি বুঝ?
ভূমিকা: একটি দেশে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বাস করে। আর এই বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান, ভাতৃত্ববোধ ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে ধর্মীয় সহনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। জনসাধারণের মাঝে ধর্মীয় সহনশীলতা থাকলে সব ধরনের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে একত্রে বসবাস করতে পারে।
বিভিন্ন ধর্মের আগমন: বঙ্গদেশের সুদুর প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করছে। বঙ্গদেশে হিন্দুধর্ম, বঙ্গীয় হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম গোড়ীয় বৈঞ্চব ধর্ম সবগুলোই একত্রিত হয়ে বসবাস করছেl
ধর্মীয় সহনশীলতা: ধর্ম এবং সংস্কৃতি পরস্পরের পরিপূরক। ধর্ম সংস্কৃতিকে সক্রিয় ভাবে প্রভাবিত করে। ঠিক তেমনি সংস্কৃতি ও ধর্মকে প্রভাবিত করে। তাই ধর্মীয় সহনশীলতার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে।বাংলাদেশে এসে বহিরাগত সকল ধর্মই বঙ্গীয় রূপ ধারণ করেছে। বঙ্গদেশের হিন্দুধর্ম, বঙ্গীয় হিন্দুধর্ম,বৈঞ্চব ধর্ম, গোড়ীয় বৈঞ্চব ধর্ম।এ সকল ধর্মে দেবদেবীর পার্থক্য রয়েছে। প্রতিটি ধর্মই তাদের নিজস্ব নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখে। তেমনি ইসলাম ধর্ম বঙ্গদেশে এসে বঙ্গীয় রূপ ধারণ করেছে। এখানে সুন্নি ইসলামের পরিবর্তে সুফিবাদী ইসলামী জনপ্রিয়।এই সুফিবাদের সাথে স্থানীয় অদ্বৈতবাদ এবং যৌগের সমন্বয় ঘটেছ। এছাড়াও ইসলাম ধর্মে সংগীত, যন্ত্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ হলেও গ্রামের বাঙালি মুসলমানরা সংগীতকে যথেষ্ট লালন করে। এছাড়া বঙ্গদেশে সহজিয়া। নাথযোগী, বাউল, মুর্শিদি ইত্যাদি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। কাজেই এদের মধ্যে বিদ্রোহ ছিল না। তারা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে বাস করত। কাজেই এই সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়াকে ধর্মীয় সহনশীলতা বলা হয়।
উপসংহার: ধর্মীয় সহনশীলতা বলতে বোঝায় সব ধর্মের লোক একসঙ্গে মিলেমিশে পাশাপাশি বসবাস করা। এর মাধ্যমে মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে তাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি ইত্যাদির ওপর মহানুভব পোষণ করে।
10.আমাদের জাতীয় জীবনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
ভূমিকা: ১৯৪৭সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হলে পাকিস্তান এবং ভারত নামের দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। যেখানে পূর্ব পাকিস্তানকে আবারো দুটি অংশে বিভক্ত করা হয় একটা পূর্ব পাকিস্তান উন্নতি পশ্চিম পাকিস্তান। কাজেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানের ওপর নিপীড়ন চালাতে থাকে। বিশেষ করে তাদের সংস্কৃতির উপর বাঙালির ভাষার ওপর 1947 সালের ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। বাংলার ইতিহাসে এ আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেননা এ আন্দোলনের পথ ধরে বাঙালি জাতির প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়।
ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব: ভাষার গুরুত্ব ব্যাপক নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ: ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট পাকিস্তানের পূর্ব অংশ তথা বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা নানাভাবে শোষিত ও শাসিত হতে থাকে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা জাতীয়তাবাদকে পুঁজি করে সংঘটিত হয়।
সম্প্রদায়ের চেতনার বিকাশ: ভাষা আন্দোলন শুরু হলে পাকিস্তানি অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিদেরকে ভারতের লেলিয়ে দেয়া দালাল এবং কুকুর বলে আখ্যায়িত করে কিন্তু বাঙালি ভাষা সৈনিকরা সেদিকে কর্ণপাত না দিয়ে ভাষা রক্ষার্থে নিজেদের জীবন পর্যন্ত দিতে দ্বিধা বোধ করেননি। যার ফলে এটা আমাদের দেশের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে সহযোগিতা করে।
রাজনীতির নতুন মেরুকরণ: অবিভক্ত বাংলার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক চেতনা তথা মুসলিম লীগের বেশ প্রভাব ছিল। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালি মুসলমানরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে থাকে। যার ফলে উদারপন্থী দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী মুসলিম লীগ পূর্ববাংলার রাজনীতিতে একক দল হিসেবে বিকাশ ঘটতে শুরু করে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অংশগ্রহণ: ভাষা আন্দোলন এমন একটি আন্দোলনে যেখানে শুধুমাত্র শিক্ষক ও ছাত্ররাই যোগদান করেননি মধ্যবিত্তরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। এজন্য ভাষা আন্দোলনের বিশেষজ্ঞ বদরুদ্দীন ওমর বলেছেন, ”বাঙালি মধ্যবিত্ত ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল যেখানে আর অন্য কোথাও নয়।”
কুসংস্কার দূরীকরণ: ভারতীয় উপমহাদেশের যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তার মধ্যে ভাষা আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এটা বাঙালি সমাজ থেকে কুসংস্কারকে ও ধর্মীয় গোঁড়ামি দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।
উপসংহার: ভাষা আন্দোলন বাঙ্গালীদের স্বাধিকার আন্দোলন। যেখানে বাঙালি তাদের মাতৃভাষা রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর। আর এ পথ ধরেই আমাদের মুক্তির সংগ্রামে ধাবিত হওয়া।
11.যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি আলোচনা করো।
ভূমিকা: ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আর এ ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে 1954 সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয় যা নির্বাচনের জন্য একটি যুগান্তকারী অধ্যায় ছিল। বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি এবং বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনীরনির্যাতনের প্রতিবাদে নির্বাচনের পথে পা বাড়ায়। ইতিহাসে এই নির্বাচন ব্যালট বিপ্লব হিসেবে খ্যাত। এই নির্বাচনে স্ব স্ব দলগুলো অংশগ্রহণ করেন এবং জনমত যাচায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যুক্তফ্রন্ট: ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার কর্তৃক ১৯৫৪ সালের ১১ মার্চ পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষিত হলে ১৯৫৩ সালে ৪ ডিসেম্বর মুসলিম লীগ বিরোধী দলগুলোযেমন – আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, গণতান্ত্রিক পার্টি ও নেজামে ইসলামী মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেl
যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি: ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার আইনসভার নির্বাচনে মুসলিম লীগ অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এরপর ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করা হয় এবং একক পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং এর উপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালে ১৪আগস্ট স্বাধীনপাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকে পুরো বাংলাকে প্রদেশের মর্যাদা দেওয়া হয়। নানা রকম অত্যাচার, নিপীড়ন, শোষণ করার উদ্দেশ্যে মুসলিম লীগ বিভিন্ন উপায় খুঁজতে থাকেন। কাজেই এ দলটি জনসাধারনের অর্থাৎ পূর্ব বাংলার মানুষের দাবি দাওয়া পুরন করতে অক্ষম ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবেগড়ে উঠে। কাজেই১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মুসলিম লীগ বিরোধী দলগুলো যেমন- আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ও নেজামে ইসলামী মিলে ফ্রন্ট গঠন করে।
উপসংহার: সুতরাং, পরিশেষে আমরা বলতে পারি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলিম লীগ পতনের পথ সুগম হয়ে পড়ে। যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে।
12.সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সমূহ উল্লেখ করো।
ভূমিকা: সামরিক বাহিনীর একটি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের প্রায় সকল দেশে সামরিক বাহিনী বিদ্যমান বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তি লাভের জন্য সামরিক শাসন বা রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ তার মধ্যে অন্যতম।
সামরিক শাসনের সংজ্ঞা: একটি দেশের বেসামরিক কাজগুলো করার জন্য যখন সামরিক লোক প্রয়োজন হয় অর্থাৎ সামরিক লোক দ্বারা পরিচালনা করা হয় তখন তাকে সামরিক শাসন বলে। বেসামরিক লোকের রাজনীতিত্ব হাটিয়ে সামরিক আইন ব্যবস্থাই সামরিক শাসন ব্যাবস্থা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: সামরিক শাসন সম্পর্কে অনেকেই মতামত দিয়েছেন, তাদের মধ্যে নিম্নে কতগুলো মতামত তুলে ধরা হলো:
S.C. Finer বলেন, ”বেসামরিক ক্রিয়া-কলাপ দেশের শাসনকার্যে সামরিক বাহিনী জড়িয়ে পড়লে তাকে সামরিক শাসন বলে অর্থাৎ বেসামরিক কর্তৃপক্ষের জায়গায় সামরিক কর্তৃপক্ষ আসীন হবে এবং বলপ্রয়োগ লিহিত থাকবে।‘’
Nordlinger তার ”Soldiers in Politics’ গ্রন্থে বলেন, ‘’ সামরিক হস্তক্ষেপ হল এমন একটা অবস্থা যেখানে সামরিক অফিসাররা তাদের প্রকৃত ক্ষমতা প্রয়োগ করে বা কর্তৃত্ব করে।”
সুতরাং বেসামরিক ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসীন হওয়াকে সামরিক শাসন বলে।
সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য: নিম্নে সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য সমূহ উল্লেখ করা হলো:
১. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে: সামরিক বাহিনী যারা রয়েছে তারা মনে করেন তাদেরকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। কাজেই নাগরিক অধিকার খর্ব হলে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দেখা দিলে তারা ক্ষমতা চর্চা করে।
২. সংবিধান স্থগিত: সামরিক বাহিনী সংবিধান স্থগিত করেন। তারা তাদের নিজেদের আদেশ-নির্দেশ, অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন এবং জোরপূর্বক নাগরিকদের ওপর চাপিয়ে দেন এবং তা সংবিধানে ঢুকিয়ে দেয়।
৩. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস: সামরিক বাহিনী তাদের শাসনামলে দমন-পীড়ন, হত্যা এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেন। আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশের ১৯৭৫ থেকে১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই সামরিক শাসন বিদ্যমান ছিল।
৪.প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ: সামরিক শাসনামলে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধুমাত্র দুটি ,বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা বাদে সকল পত্রিকা বন্ধ করে দেয় চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে।
৫. সামরিক আমলাদের সুযোগ-সুবিধা: সামরিক শাসন কে টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক বাহিনীর মধ্যে থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয় এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ শাসনামলেসামরিক বাহিনীর ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৬. জনপ্রিয়তা লাভের উদ্দেশ্যে: সামরিক বাহিনীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশ ভ্রমণ করত, বিদেশী কর্মকর্তা নিয়ে আসত এবং ব্যয় হীন খাতে ব্যয় করত। এর জনপ্রিয়তা সামান্য বাড়লেও জনগণ গণতন্ত্র কামনা করে।
উপসংহার: সামরিক বাহিনী একটি দেশের নিরাপত্তা সর্বোত্তম,শক্তিশালী, সুসংগঠিত এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠিত। এ বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে সকল বিশৃঙ্খলানিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ক্ষমতার চর্চা করে থাকেন।
13.সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে কি বুঝ ?
ভূমিকা: সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে বোঝায় প্রতিটি সমাজ ব্যবস্থার অগ্রগতি ও কল্যাণের অন্যতম মূল চালিকা শক্তি। প্রতিটি সমাজ ব্যবস্থায় সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বিদ্যমান থাকে। কাজেই সমাজ ব্যবস্থার বৈচিত্র এবং সমন্বয় গড়ে তুলতে সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সংস্কৃতি সমাজ ব্যবস্থা এবং সমাজের মানুষের জীবন প্রণালী কে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে।
সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা: সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে বোঝায় বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে খাপ খাইয়ে নিয়ে নিজেদের সংস্কৃতি অনুযায়ী বসবাস করা অর্থাৎ মানুষে- মানুষে, সমাজে- সমাজে, এবং জাতিতে-জাতিতে অর্থাৎ দেশের সকল সংস্কৃতিকে মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান বজায় রাখা।
সমাজে বসবাসরত সকল মানুষ একে অন্যের সংস্কৃতিকে মেনে নিয়ে সহবস্থান করাই হলো সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা মাটিতে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক এবং ভাষাগোষ্ঠীর লোকদের মিশ্রণের ফলে যেসব সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা। কাজেই সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা: i. সাংস্কৃতিক সাঙ্গীকরন ও ii. সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ।
যখন এক সংস্কৃতির লোক অন্য সংস্কৃতি তে গিয়ে সেই সংস্কৃতির সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ গ্রহণ করে নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে মিলন ঘটায় তখন সাংস্কৃতিক সাঙ্গীকরন সাধিত হয় বা ঘটে। আর সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ বলতে বোঝায় এক সংস্কৃতির লোক অন্য সংস্কৃতির সমস্ত সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ গ্রহণ করে থাকে। কাজেই এভাবে এক সংস্কৃতির সাথে অন্য সংস্কৃতির আচার-আচরণ, মূল্যবোধ, জীবনধারার প্রণালী অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে মিশে যায়। কাজেই সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে মূলত সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলা হয়।
উপসংহার: কাজেই উপযুক্ত আলোচনা থেকে এটা বলা যায় যে, এই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ধারণ করা মানুষগুলোর শান্তিপূর্ণ বসবাসের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সমন্বয়বাদিতা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। কাজেই যে সমাজে মানুষে- মানুষে হানাহানি বিশৃংখলা বিরাজ করে সে সমাজে বসবাস করা অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সুতরাং সমাজে বিশৃংখলা পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা কাম্য নয়।
14.বসু সোহরাওয়ার্দী চুক্তি কি?
ভূমিকা: ১৯৪৭ সালের ২০ মে শরৎচন্দ্র বসুর কোলকাতার ১নং উডবার্ন বাসভবনে মুসলিমলীগ ও কংগ্রেস নেতাদের মধ্যকার এক সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়। মুসলিমলীগের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী, ফজলুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, আবুল হাশিম ও এ এম মালিক এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্ৰ বসু, কিরণ শংকর রায় ও সত্তরঞ্জন বখশী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাক্রমে তারা সকলে একমত হয়ে স্বাধীন অখন্ড বৃহত্তর বাংলা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। মুসলিম লীগের হয়ে আবুল হাশিম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্র বসু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির ধারা বা বৈশিষ্ট্য:
i.বাংলা হবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এর নিজের মঙ্গল-অমঙ্গল, অন্যান্য রাষ্ট্র বা অংশের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ- সবকিছুই সে নিজে ঠিক করবে।
ii.হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাতের উপর ভিত্তি করে আসন সংখ্যা বন্টন করে আইন সভার নির্বাচন হবে। উক্ত নির্বাচনে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। হিন্দু ও তফশিলি হিন্দুদের মধ্যে আসন বন্টন হবে উভয়ের সম্মতিক্রমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অথবা জনসংখ্যার অনুপাতে। একাধিক প্রার্থী হলে ভোট হবে নির্বাচনমূলক ও বন্টণধর্মী এবং সর্বোচ্চ আসন সংখ্যাভিত্তিক হবে না। কোনো প্রার্থী যদি নিজ সম্প্রদায় হতে সর্বোচ্চ ভোট এবং অন্য সম্প্রদায় হতে ২৫% ভোট পায় তবে সে নির্বাচিত বলে গণ্য হবে। এর অন্যথা হলে যে তার সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তাকে নির্বাচিত করা হবে।
iii.স্বাধীন বাংলার এই চুক্তি ব্রিটিশ সরকার মেনে নিলে, অর্থাৎ বাংলা বিভক্ত না হলে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে যেখানে প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত সমসংখ্যক হিন্দু ও মুসলমান সদস্য থাকবে। মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হবে একজন মুসলমান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবে একজন হিন্দু।
iv.অবিভক্ত বাংলার নতুন সংবিধান ও মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত সামরিক বাহিনী ও পুলিশের চাকরিতে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই চাকরি পাবার সমান সুযোগ পাবে। এসকল চাকরিতে শুধুমাত্র বাঙালিরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।
ইউরোপীয় সম্প্রদায় বাদ দিয়ে নতুন বঙ্গীয় আইন সভায় এমন একটি সংবিধান পরিষদ গঠন করা হবে যেখানে মুসলমান সদস্য হিসেবে ১৬ জন মুসলমান এবং অমুসলমান সদস্য হিসেবে ১৪ জন হিন্দু থাকবে।
উপসংহার: পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যদিও এই অসাম্প্রদায়িক প্রস্তাব তৎকালীন কংগ্রেস, মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও ব্রিটিশ সরকার গ্রহণ করেনি, ফলে অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের উদ্যোগ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যদি এ প্রচেষ্টা সফল হতো, তবে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি অখণ্ড বাংলা তৃতীয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে আবির্ভুত হতো।
গ বিভাগ
1.বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো I
ভূমিকা: বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ ও মনোরম I সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশকে পৃথিবীর বৃহত্তম ব দ্বীপ বলা হয় I ভূ-প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বাংলাদেশ অসাধারণ l উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু এ দেশের ভূ-খন্ড I সমগ্র দেশ বিস্তীর্ণ সমভূমি শুধুমাত্র পূর্বে সামান্য উচ্চভূমি রয়েছে I দেশটিতে অসংখ্য নদ-নদী রয়েছে I এত নদ নদী বিধৌত উর্বর সমতল ভূমি পৃথিবীতে দেখা যায় না বললেই চলে I
ভূপ্রকৃতির শ্রেণীবিভাগ: ভৌগলিক ও ভূমির গঠন প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি কে তিনটি ভাগ করা যায় I যথা:
টারশিয়ারী যুগের পাহাড় সমূহ
প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ বা চত্বর ভূমি
সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি
নিম্নভূমি প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো: টারশিয়ারী যুগের পাহাড় সমূহ: রাঙ্গামাটি বান্দরবান ,খাগড়াছড়ি ,চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এলাকাগুলো নিয়ে টারশিয়ারী যুগের পাহাড় সমূহ গঠিতI হিমালয় পর্বত গঠিত হওয়ার সময় এসকল পাহাড় সৃষ্টি হয় বলে একে টারশিয়ারি পাহাড় বলে I এ পার্বত্য ভূমির বৈশিষ্ট্য হলো বেলে পাথর সিলেট জাতীয় প্রস্তর এবং কদমের সংমিশ্রণ দ্বারা গঠিত I এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ বাস ,বেত জাতীয় উদ্ভিদ জন্মে I টারশিয়ারী যুগের পাহাড় সমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় I যথা: দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় এবং উত্তর উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ I
i.দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় সমূহ: চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়সমূহ কে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় বলা হয় এছাড়াও খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা জেলা এর কিছু অংশ এর অন্তর্ভুক্ত এদের গড় উচ্চতা 2004 পর্যন্ত হয়ে থাকে তাজিংডং বা বিজয় এ অঞ্চলে অবস্থিত যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এর উচ্চতা 1231 মিটার এছাড়াও ক্রিক কিওক্রাডাং সহ বিভিন্ন পাহাড় এ অঞ্চলে দেখা যায় বেলেপাথর সেল কর্দম এসকল পাহাড় গঠিত
ii.উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য ভূমি: পার্বত্য ভূমি এ পার্বত্য ভূমির উচ্চতা 60 থেকে 90 মিটার এর মধ্যে হয় সিলেট জেলার উত্তর উত্তর পূর্বাংশ ময়মনসিংহ নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশ এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ হবিগঞ্জের ছোট-বড় পাহাড় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এছাড়াও কিছু পাহাড় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মাঝি গোপালগঞ্জের কাছে দেখা যায়
প্লাইস্টোসিন কালের পাহাড় বা সোপানসমূহ: প্লাইস্টোসিন কালের পাহাড় গুলো প্রায় 25 বছর পূর্বে গঠিত হয় লাল রঙের অঞ্চলের মাটির I প্রাকৃতিক গ্যাস চুনাপাথর কয়লা প্রভৃতি খণিজ পাওয়া যায় এ অঞ্চলে I এছাড়াও এখানে ধান পাট তামাক ভুট্টা পান উৎপন্ন হয় I প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় I প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:
i.বরেন্দ্রভূমি: বরেন্দ্রভূমি কে প্রাচীনকালের সবচেয়ে বৃহৎ সোপান বলা হয় I এটি পূর্বে করোতোয়া ও পশ্চিমে মহানন্দা দ্বারা ঘেরাও রয়েছে I বগুড়া দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার কিছু অংশ এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত I 3600 বর্গমাইল নিয়ে এ অঞ্চলের আয়তন I ধান পাট গম ভুট্টা প্রভৃতি ফসল এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মে I
ii.মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়: মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এর আয়তন 1585 বর্গমাইল উত্তর উত্তরের ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে নদী থেকে দক্ষিণের বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত অঞ্চল বিস্তৃত ঢাকা ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত কৃষিকাজের জন্য উপযোগী নয় I এ অঞ্চল কাঁঠাল ও গজারিয়ার জন্য বিখ্যাত I
ii.লালমাই পাহাড়: লালমাই পাহাড়ের আয়তন 34 বর্গমাইল I এর উচ্চতা 70 ফুট থেকে 150 ফুট পর্যন্ত I এ পাহাড়টি কুমিল্লা শহরের দক্ষিনে অবস্থিত I লালচে নুরি বালিদারা অঞ্চল গঠিত I এখানে কৃষি ফসল ও সবজি জন্মে I
সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি: দেশের 90 শতাংশ ভূমি এ অঞ্চলের আওতায় পড়ে পদ্মা মেঘনা যমুনা ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদ-নদী ও এদের শাখা নদী ও উপনদীর বাহিত পলিমাটি অঞ্চল গঠিত সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে এদের গড় উচ্চতা 9 মিটার এ অঞ্চলের আয়তন 1 লক্ষ 24 হাজার 265 বর্গমিটার এ অঞ্চল কে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো I
i.কমিল্লা সমভূমি: comilla-কুমিল্লা সমভূমির মোট আয়তন 7404 বর্গমিটার অঞ্চল বর্ষাকালে ডুবে থাকে তবে প্রচুর কৃষি ফসল এ অঞ্চলে জন্মায় I চাঁদপুর ,কুমিল্লা ,নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে কুমিল্লা সমভূমি গঠিত
ii.সিলেট সমভূমি: সিলেট সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার কিশোরগঞ্জ নেত্রকোনা জেলার পূর্বাঞ্চল নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত I এ অঞ্চল ও বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে I এ অঞ্চলে শীতকালে ইরি ও বোরো ধানের চাষ হয় I
iii.পাদদেশীয় প্লাবনভূমি: রংপুর ও দিনাজপুর জেলা পাদদেশীয় প্লাবন ভূমির অন্তর্গত হিমালয় পর্বত থেকে পলিমাটি এ অঞ্চলে প্রবাহিত হয় I ধান পাট ইক্ষু এখানকার প্রধান ফসল I
iv.গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা প্লাবন সমভূমি: রাজশাহী ঢাকা ময়মনসিংহ পাবনা ও ঢাকা অঞ্চল অঞ্চলের কিছু অংশ এর অন্তর্গত I গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা সমভূমি বাংলাদেশের প্রধান প্লাবন সমভূমি I
v.বদ্বীপ সমভূমি: কুষ্টিয়া ,যশোর, ফরিদপুর ,বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চলের বৃহত্তম এবং রাজশাহী পাবনা ও টার কিছু অংশ ব-দ্বীপ সমভূমির অন্তর্গত I বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সমভূমিকে বদ্বীপ সমভূমি বলা হয় aএ অঞ্চলে প্রচুর খাদ্যশস্য জন্মায় I উপকূলীয় বদ্বীপ অঞ্চল কে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় যথা মৃত মৃতপ্রায় বদ্বীপ সক্রিয় ও অপরিপক্ক বদ্বীপ I
উপসংহার: পরিশেষে পরিশেষে শেষে এটি বলা যায় যে ভূ-প্রকৃতি একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূপ্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমাজের মানুষের উপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে I বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত সৌন্দর্য মন্ডিত I এবং ভূপ্রকৃতি একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ I
2.সাম্প্রদায়িকতা বলতে কি বুঝ ? উপনিবেশিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ও এর ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকা: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত ভারতীয় উপমহাদেশ। প্রাচীনকাল থেকে সুবিশাল ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলমান ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ,নির্বিশেষে একে অন্যের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের সূচনা লগ্ন থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার সূত্রপাত ঘটে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সু সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে এবং 1947 সালে দেশবিভাগের মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে ।
সাম্প্রদায়িকতা: ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাদের শাসন ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীল করার জন্য হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে মতপার্থক্য তৈরি করেছিল তারই ফলশ্রুতি হলো সাম্প্রদায়িকতা । মোটকথা ধর্মের ভিত্তিতে কোন একক সম্প্রদায়ের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করাকেই মূলত সাম্প্রদায়িকতা হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব বা বিকাশ: ভারতীয় উপমহাদেশে উপন্যাসিক উপনিবেশিক শাসন আমল তথা ব্রিটিশ শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে বিভিন্ন উপাদান প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো।
ধর্মাশ্রিত জাতীয়তাবাদ: ধর্মাশ্রিত জাতীয়তাবাদ বা ধর্মকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা জাতীয়তা বোধই মূলত সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দেয়।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী ধর্মকে ব্যবহার করে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রাধান্য ও প্রতিপত্তি বিস্তারের চেষ্টা করে ।সুতরাং উপনিবেশিক শাসনামলে ধর্মাশ্রিত জাতীয়তাবাদ থেকে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম হয়েছিল এতে কোন সন্দেহ নেই।
ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব: ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা উদ্ভাবনে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব অন্যতম যেহেতু ব্রিটিশ সম্প্রদায় মুসলমানদের থেকে কৌশলে ক্ষমতার মসনদ দখল করেছিল সেহেতু তারা মুসলমানদেরকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা-বঞ্চন করতে থাকে এবং হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রকাশ করে যার ফলে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে একটি ফাটল সৃষ্টি হয় এবং সাম্প্রদায়িকতার বীজ অঙ্কুরিত হয় ।
দাপ্তরিক ভাষা: মুসলিম শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশের দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফার্সি কিন্তু উপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী হিন্দুদের পরোচনায় ইংরেজিকে দাপ্তরিক ভাষা করলে, মুসলমানদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে যায় ফলশ্রুতিতে মুসলিম এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি হয়
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : উপনিবেশিক শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুসলিম সম্প্রদায় বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হয় তারা তাদের জমিদারী,রাজনৈতিক কর্তৃত্ব সামাজিক মর্যাদাসহ সকল পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় এবং সেই স্থানে হিন্দুদের একটি বিরাট গোষ্ঠী অবস্থান নেয় এর ফলশ্রুতিতে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপক আকার ধারণ করে।
বঙ্গভঙ্গ: 1905 সালে লর্ড কার্জনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বঙ্গভঙ্গ হলে হিন্দু সম্প্রদায় এর ঘোর বিরোধিতা শুরু করে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে অবস্থান নেয় যার ফলে হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘুমন্ত সাম্প্রদায়িকতা চরমভাবে জেগে ওঠে।
বঙ্গভঙ্গ রদ: উপনিবেশিক শাসনামলে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধিতে বঙ্গভঙ্গের তুলনায় বঙ্গভঙ্গ রদ অধিক ভূমিকা পালন করেছিল ।কেননা বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক স্বার্থে আঘাত লাগে , এবং তারা হিন্দুদের প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে এবং নিজেদেরকে পৃথক জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বদ্ধপরিকর হয় এর ফলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি চিরকালীন বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়।
নেতিবাচক মনোভাব: ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাদের ক্ষমতার মসনদ দীর্ঘায়িত করতে তাদের সমর্থক গোষ্ঠী সৃষ্টি করতে উদ্যত হলে হিন্দুরা তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন দেয় এবং ইংরেজদের শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাদেরকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে যার ফলশ্রুতিতে হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয় এটি সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে।
ভাগ কর শাসন কর নীতি: উপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশ সম্প্রদায়ের ভাগ কর শাসন কর নীতি সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয় যার মাধ্যমে ব্রিটিশরা ভারতের হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।
সাম্প্রদায়িক সংগঠন সৃষ্টি: হিন্দু-মুসলমান তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন সৃষ্টি করে যেমনঃ কংগ্রেস,মুসলিম লীগ এর মধ্যে অন্যতম এই সংগঠনগুলো পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল।
এককেন্দ্রিক মন্ত্রিসভা গঠন: 1937এবং1946 নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের অসহযোগিতামূলক আচরণ এবং মুসলিম প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন প্রদেশের মন্ত্রিসভা গঠন করলে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্ভাবনা চিরতরে হারিয়ে যায় এবং উপমহাদেশে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক আরো একধাপ ত্বরান্বিত হয়।
এছাড়াও শ্রেণীস্বার্থ জনিত দ্বন্দ্ব,শাসকশ্রেণীর মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব, হিন্দু স্বার্থবাদী নেতাদের বেঙ্গল প্যাক্ট প্রস্তাবের বিরোধিতা উপনিবেশিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ঘটাতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
সাম্প্রদায়িকতার ফলাফল:
হিন্দু-মুসলিম রাজনীতি বিভক্ত: হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার চেতনা বৃদ্ধি ফলে1885 সালে প্রতিস্ঠিত অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন কংগ্রেসের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক মনোভাব ঢুকে পড়লে মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ থেকে সরে দাঁড়ায় এবং নিজস্ব রাজনীতি শুরু করে
দ্বিজাতি তত্ত্বের উদ্ভব: 1937 সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রাদেশিক নির্বাচনে কংগ্রেস 6 টি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে মুসলিম লীগ যৌথভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব দেয় কিন্তু কংগ্রেস তা অস্বীকার করে এককভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করে এবং মুসলিম নেতৃবৃন্দ মনোক্ষুন্ন হয়ে নিজেদের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ধর্মীয় দিক বিবেচনা করে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উপস্থাপনের মাধ্যমে 1940 সালের 22 শে মার্চ লাহোরে দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষণা কর
ভারত পাকিস্তানের সুচনা: 1947 সালে উপনিবেশিক শাসন আমলের সমাপ্তি লগ্নে হিন্দু-মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চরম আকার ধারণ করে এতে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং সাম্প্রদায়িকতা কে প্রাধান্য দিয়েই ভারতীয় উপমহাদেশ কে ভারত পাকিস্তান নামে বিভক্ত করে দেয়।
এছাড়াও উপনিবেশিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভবের ফলে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের অবনতি ,কলকাতা দাঙ্গা, দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকত্ব সৃষ্টি, বাংলা ও বিহার দাঙ্গা, উপমহাদেশের সর্বত্র একটি বিশৃঙ্ঘলা পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যার চূড়ান্ত সমাধান হয়েছিল 1947 সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে।
উপসংহার: পরিশেষে, আমরা বলতে পারি যে, ভারতীয় উপমহাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্থাপন করেছিল হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা তার মূলে কুঠারাঘাত করে । আর এ সাম্প্রদায়িকতা মূলত হিন্দু-মুসলমানদের বিরোধের একমাত্র ফসল।
3.অখণ্ড স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কি কি? সেগুলো ব্যর্থ হয়েছিল কেন ব্যখ্যা করো।
ভূমিকাঃ সৃষ্টিলগ্ন থেকেই ভারত কখনোই একটিমাত্র রাষ্ট্র ছিল না। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র প্রভৃতির কারণে ভারতবাসীদের মধ্যে বিভিন্নতা ছিল। জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিভিন্নতার কারণে ভারতে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা ছিল। সম্ভাবনাময় জাতি হিসেবে বাঙালিরা ছিল অন্যতম।
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তিকরণ সফল হবার ঠিক প্রাক্কালে তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ২৭ এপ্রিল দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেন যা ছিল স্বাধীন সার্বভৌম অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রস্তাব।
বসু-সোহরাওয়ার্দী চুক্তি: ১৯৪৭ সালের ২০ মে শরৎচন্দ্র বসুর কোলকাতার ১নং উডবার্ন বাসভবনে মুসলিমলীগ ও কংগ্রেস নেতাদের মধ্যকার এক সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়। মুসলিমলীগের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী, ফজলুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, আবুল হাশিম ও এ এম মালিক এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্ৰ বসু, কিরণ শংকর রায় ও সত্তরঞ্জন বখশী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাক্রমে তারা সকলে একমত হয়ে স্বাধীন অখন্ড বৃহত্তর বাংলা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। মুসলিম লীগের হয়ে আবুল হাশিম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্র বসু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির ধারা বা বৈশিষ্ট্য:
i.বাংলা হবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এর নিজের মঙ্গল-অমঙ্গল, অন্যান্য রাষ্ট্র বা অংশের সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ- সবকিছুই সে নিজে ঠিক করবে।
ii.হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাতের উপর ভিত্তি করে আসন সংখ্যা বন্টন করে আইন সভার নির্বাচন হবে। উক্ত নির্বাচনে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। হিন্দু ও তফশিলি হিন্দুদের মধ্যে আসন বন্টন হবে উভয়ের সম্মতিক্রমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অথবা জনসংখ্যার অনুপাতে। একাধিক প্রার্থী হলে ভোট হবে নির্বাচনমূলক ও বন্টণধর্মী এবং সর্বোচ্চ আসন সংখ্যাভিত্তিক হবে না। কোনো প্রার্থী যদি নিজ সম্প্রদায় হতে সর্বোচ্চ ভোট এবং অন্য সম্প্রদায় হতে ২৫% ভোট পায় তবে সে নির্বাচিত বলে গণ্য হবে। এর অন্যথা হলে যে তার সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তাকে নির্বাচিত করা হবে।
iii.স্বাধীন বাংলার এই চুক্তি ব্রিটিশ সরকার মেনে নিলে, অর্থাৎ বাংলা বিভক্ত না হলে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে যেখানে প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত সমসংখ্যক হিন্দু ও মুসলমান সদস্য থাকবে। মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হবে একজন মুসলমান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবে একজন হিন্দু।
iv.অবিভক্ত বাংলার নতুন সংবিধান ও মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত সামরিক বাহিনী ও পুলিশের চাকরিতে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই চাকরি পাবার সমান সুযোগ পাবে। এসকল চাকরিতে শুধুমাত্র বাঙালিরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।
v.ইউরোপীয় সম্প্রদায় বাদ দিয়ে নতুন বঙ্গীয় আইন সভায় এমন একটি সংবিধান পরিষদ গঠন করা হবে যেখানে মুসলমান সদস্য হিসেবে ১৬ জন মুসলমান এবং অমুসলমান সদস্য হিসেবে ১৪ জন হিন্দু থাকবে।
অখন্ড আন্দোলন ব্যর্থ হবার কারণ: সুপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে অখন্ড বাংলা আন্দোলনের পরিকল্পনা গৃহীত হলেও তা ব্যর্থ হয়। এ আন্দোলন ব্যর্থতার উল্লেখযোগ্য কারণ সমূহ হলো:
সাংগঠনিক দুর্বলতা: প্রস্তাব উদ্যোক্তারা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল না।
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দ্বন্দ্ব: অখন্ড বাংলা আন্দোলন ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হলো কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে অনৈক্য।
হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা: ১৯৪০ সালের পর থেকে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ভয়াবহ দাঙ্গার পর মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যকার সম্পর্কে চিড় ধরে।
জনসংখ্যায় বিভক্তিকরণ: জনসংখ্যার দিক থেকে পশ্চিম বাংলায় হিন্দু ও পূর্ব বাংলায় মুসলমান বেশি ছিল। ফলে হিন্দুদের মধ্যে ক্রোধের সৃষ্টি হয়। তারা কোলকাতার খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকা একা ভোগ করতে চেয়েছিল।
কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্বে অবহেলা: কমিউনিস্ট পার্টি অখন্ড বাংলা আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে এবং ফলস্বরূপ গৃহীত পদক্ষেপসমূহ অকার্যকর থেকে যায়।
কংগ্রেসের দ্বি-মানসিকতা: আন্দোলনের সূচনায় কংগ্রেস মুসলিম লীগের পক্ষে থাকলেও পরবর্তীতে কংগ্রেসের হাইকমান্ড এর বিরোধিতা করে। তন্মধ্যে জওহরলাল নেহেরু ও সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল তাদের তীব্র সমালোচনার জন্য উল্লেখযোগ্য।
বিলম্বিত উদ্যোগ: অনেকের মতে উক্ত আন্দোলন ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হলো এটি একটি বিলম্বিত উদ্যোগ। সময় স্বল্পতার কারণে উক্ত আন্দোলনটির যথাযথ বিকাশ ঘটেনি।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। যদিও পরবর্তীতে মোঘল ও ব্রিটিশ আমলে বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ১৯৪৭ সালে সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক গৃহিত অখন্ড বাংলা আন্দোলনে স্মরণকালের অন্যতম মহান উদ্যোগ গুলোর একটি। তার এই মহান উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও এই উদ্যোগের কারণেই তিনি আজ অব্দি বাংলার মানুষের কাছে প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।
4.লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয় এবং বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো ।
অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মূল কথা এবং প্রকৃতি আলোচনা করো ।
অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল।
অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল এ প্রস্তাবের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা । ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা। নিখিল ভারত মুসলিম লীগ অধিবেশনে মুসলিমদের অভিমত ছিল যে, কোন শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা এদেশে কার্যকর হবে না এবং মুসলমানগন গ্রহণ করবে না ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু থেকেই ভারতীয় মুসলমানগন তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের ডাক দেন । এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন মুসলিম লীগ পৃথক আবাসভূমি গড়ে তোলার জন্য দাবি পেশ করেন । ১৯৪০ সালে 23 শে মার্চ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রস্তাব পেশ করেন । এই প্রস্তাব ওই ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত ।
লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় : লাহোর প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্য বা বক্তব্য আলোচনার পূর্বে ১৯৪০ সালে 23 শে মার্চ মুসলিম লীগের অধিবেশনে যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল তার ওপর রচনা করা আবশ্যক । নিম্নে তা আলোচনা করা হল :
নিখিল ভারত মুসলিম লীগ অধিবেশনে মুসলিমদের অভিমত ছিল যে, কোন শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা এদেশে কার্যকর হবে না মুসলমানগন গ্রহণ করবে না যদি তা প্রস্তাবিত দাবি-দাওয়া ভিত্তিক না হয় । যেমন-প্রয়োজনবোধে সীমানার পুনঃবিন্যাস সাধন করে এবং ভৌগলিক দিক থেকে পরস্পর নিকটবর্তী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর সমন্বয় সাধন করে যেমন- ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলো একত্রিত করে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিণত হবে এবং এদের অঙ্গরাজ্য হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম ।
লাহোর প্রস্তাব: শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক মুসলিম লীগ এক প্রতিবেদনে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন । প্রস্তাবটি বিশ্লেষণ করলে মুসলিম লীগের কিছু দাবি দেখা যায় । যথা-
ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী সংলঙ্গ এলাকাগুলোকে অঞ্চলে চিহ্নিত করতে হবে।
ভারতে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ গঠন করতে হবে।
স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ গঠনের প্রয়োজনে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোর সীমানা পরিবর্তন করতে হবে।
এসব স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের প্রদেশগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম ।
ভারতীয় উপমহাদেশে সকল অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য সংবিধান কার্যকর ও বাধ্যতামূলক বিধান থাকবে।
লাহোর প্রস্তাবের অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতা : ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন । লাহোর প্রস্তাবের উপযুক্ত আলোচনা থেকে কতগুলো বিষয় সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় না । লাহোর প্রস্তাবে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে যথা-
স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন : লাহোর প্রস্তাবে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ গঠনের কথা বলা হয়ে থাকলেও মূলত উত্তর-পশ্চিম মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেতনা প্রকাশ পায় । কিন্তু লাহোর প্রস্তাবে এই সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা উল্লেখ করা হয়নি কোন কোন প্রদেশ নিয়ে গঠিত হবে । বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশে কিভাবে বিভক্ত হবে তা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছিল না । যা লাহোর প্রস্তাবের অন্যতম সীমাবদ্ধতা ।
সার্বভৌমের অস্পষ্টতা: লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বাধীন ও সার্বভৌম ।প্রস্তাবের বিরোধিতা স্ববিরোধিতা সুস্পষ্ট ।
শব্দ ব্যবহারে অস্পষ্টতা: লাহোর প্রস্তাবের ধারা গুলোতে অস্পষ্টতা ও স্ববিরোধিতা লক্ষ্য করা যায় । এখানে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেমন (Independes states) স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ এবং(Sovereign) সার্বভৌমত্ব যার অর্থ লাহোর প্রস্তাবের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা হিসেবে পরিগণিত হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি: লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় । কিন্তু লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ গঠিত হবে । যা লাহোর প্রস্তাবের বিরোধী।
দ্দ্বিজাতি তত্ত্ব: লাহোর প্রস্তাবের মূল ভিত্তি ছিল দ্বিজাতি তত্ত্ব ।এ তত্ত্বের মূল কথা হলো ভারতীয় মুসলমান একটি সম্প্রদায় নয় তার একটি স্বতন্ত্র জাতি । আর এই জন্যই ভারতীয় মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অধিকার রয়েছে ।
লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য: উপযুক্ত আলোচনা থেকে আমরা লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই যথা-
ভৌগোলিক সীমানা নির্ধারণ: লাহোর প্রস্তাব কে বলা হয় যে, ভৌগলিক এলাকার প্রদেশগুলো সীমানা নির্ধারণ করে আলাদা আলাদা অঞ্চল গঠন করতে হবে । যাতে উত্তর-পশ্চিম পূর্ব ভারতে অবস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান নিয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা যায় ।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার: লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে, সকল অঙ্গরাজ্যে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, শাসন সংক্রান্ত অধিকার রক্ষার জন্য ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানে বিভিন্ন রক্ষাকবচের সুনির্দিষ্ট পন্থাসমূহ উল্লেখ থাকতে হবে ।
মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা: ভারতের মুসলমান এবং অন্যান্য সম্প্রদায়গুলোর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে উল্লেখ থাকতে হবে
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে লাহোর প্রস্তাব ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উল্লেখযোগ্য মাধ্যম । পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় । মুসলমানরা স্বার্থ রক্ষায় লাহোর প্রস্তাব ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
5.ছয় দফা কর্মসূচি ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকা: বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে ছয় দফা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ছিল একটি সাঁকো যাতে চেপে স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়া যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রোড ম্যাপ মূলত রচিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা থেকেই। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। আমরা এখন এই ছয় দফা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব:
ছয় দফা দাবির প্রেক্ষাপট: 1965 সালে কাশ্মীর কে কেন্দ্র করে পাক-ভারত যুদ্ধ সংঘটিত হয় 6 সেপ্টেম্বর এবং এই যুদ্ধ 17 দিন স্থায়ী ছিল। আর এই যুদ্ধের সময় পূর্ব বাংলার জনগণ অরক্ষিত ছিল। তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম বাহাদুর এর মধ্যে 10 জানুয়ারি ঊনিশো ছেষট্টি সাল।
ছয় দফা দাবি ঘোষণা: তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে 1966 সালের 6 ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা একটি সম্মেলনের আয়োজন করে।আর এই সম্মেলনে যোগদানের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান 4 ফেব্রুয়ারি লাহোরে যান। পরদিন অর্থাৎ পাঁচ ফেব্রুয়ারি সাবজেক্ট কমিটির সভায় তার ছয় দফা দাবি পেশ করেন এবং তার সম্মেলনের আলোচ্য সূচী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে। যার ফলশ্রুতিতে শেখ মুজিব 6 ফেব্রুয়ারি সম্মেলন বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন।
ছয় দফার পরিপূর্ণ ঘোষণা: ছয় দফা দাবি মূলত তিনবার ঘোষণা করা হয়। প্রথমবার 5 এ ফেব্রুয়ারি 1966 সালে কিন্তু সেটা প্রত্যাখ্যান করা হয়। দ্বিতীয়বার 13 ই ফেব্রুয়ারি 1966 সালের সেটা হচ্ছে বিরোধী দলের সম্মেলনে এবং সর্বশেষ 23 শে মার্চ 1966 সালে লাহোরে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন।
ছয় দফা কর্মসূচি: ছয় দফা দাবির মূল ভিত্তি ছিল লাহোর প্রস্তাব।আর এই লাহোর প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই 1966 সালে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলার বীজ বপনের ভিত্তিস্বরূপ ছয় দফার কথা ঘোষণা করেন। আর এই ছয় দফা দাবিগুলো হলো:
শাসনতান্ত্রিক কাঠামো: ছয় দফা দাবির প্রথম দাবি হলো শাসনতান্ত্রিক কাঠামো গঠনের দাবি। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করে পাকিস্তানকে একটি সত্যিকারের ফেডারেশন রূপে গড়তে হবে। তাতে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার থাকবে। সকল নির্বাচন সর্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটে অনুষ্ঠিত হবে। আইন সভাসমূহের সার্বভৌমত্ব থাকবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: এতে বলা হয়ে থাকে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দেশ রক্ষা ও পররাষ্ট্রীয় ব্যাপার এই দুইটি বিষয় থাকবে। অবশিষ্ট সমস্ত বিষয় স্টেটসমূহের বা প্রদেশের হাতে থাকবে।
মুদ্রা ও অর্থ বিষয়ক ক্ষমতা: পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি সম্পূর্ণ পৃথক অথচ সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা প্রচলন করতে হবে। এই ব্যবস্থা অনুসারে কারেন্সি কেন্দ্রের প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। দুই অঞ্চলের জন্য দুটি স্বতন্ত্র স্টেট ব্যাংক থাকবে। অথবা দুই অঞ্চলের জন্য একই কারেন্সি থাকবে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানের পাচার হতে পারবে না।
রাজস্ব কর ও শুল্ক সংক্রান্ত ক্ষমতা: সকল প্রকার কর ও খাজনা ধার্য এবং আদায়ের ক্ষমতা আঞ্চলিক সরকারের হাতে থাকবে। আঞ্চলিক সরকারের আদায়ি রেভিনিউ এর নির্ধারিত অংশ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেল তহবিলে জমা হয়ে যাবে।
বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা: দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক পৃথক হিসাব রাখতে হবে। এবং দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা যার যার এখতিয়ারে থাকবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য উভয় অংশ সমান অথবা নির্ধারিত আনুপাতিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা প্রদান করবে। আঞ্চলিক সরকারই বিদেশীদের সাথে বাণিজ্য চুক্তি ও আমদানি রপ্তানি করার অধিকার রাখবে।
আঞ্চলিক সেনা বাহিনী গঠনের ক্ষমতা: পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা একটি আধা সামরিক বাহিনী গঠন করতে হবে।
বাঙালির জাতীয়তাবাদ বিকাশে 6 দফার গুরুত্ব: বাঙালির জাতীয়তাবাদ বিকাশে ছয় দফার গুরুত্ব অত্যধিক। ছয় দফাকে বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়। ইংল্যান্ডের গণতন্ত্রের ইতিহাসের ভিত্তি যেমন ম্যাগনাকার্টা তেমনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ছয় দফাকে উজ্জ্বল ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়।কারণ এই ঘটনায় নিহিত ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবি, অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি, বাঙালি জাতি আত্মমর্যাদা কে টিকিয়ে রাখার দাবি। 1971 সালে যে মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বাঙালিরা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন তার বীজ এই ছয় দফার মধ্যে রোপন করা হয়েছিল। তাই ছয় দফাকে বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ছয় দফা কর্মসূচির লক্ষ্য: কতিপয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে। এসব দাবির মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের শোষণ নির্যাতন ও নিপীড়নমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা।
# ছয় দফা দাবির প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তানে সত্যিকার ফেডারেল ও সংসদীয় পদ্ধতির সরকার চালু করা।
# ছয় দফার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি ব্যতীত অন্যান্য সকল বিষয় স্টেট সমূহের হাতে রাখার ব্যবস্থা করা।
#পাকিস্তানের উভয় অংশে একই মুদ্রা চালু করা।
# রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
#শোষণ শাসন ও বৈষম্যমুক্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিনির্মাণ।
# প্রাদেশিক সরকারকে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষমতা প্রদান করা।
এগুলো হলো 6 দফা কর্মসূচির প্রধান প্রধান লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।
ছয় দফা কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া: 6 দফার প্রশ্নে পাকিস্তানের শাসক চক্রের মনোভাব ছিল অত্যন্ত নেতিবাচক। কারণ ছয় দফা উত্থাপিত হবার পরেই পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দেওয়া হয়। করাচিতে পূর্ব পাকিস্তানের আইন ও সংসদীয় মন্ত্রী আব্দুল হাই চৌধুরী ছয় দফাকে রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন: ছয় দফা কর্মসূচি প্রকৃতপক্ষেই ছিল বাঙ্গালীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সনদ। 6 দফা সহজেই তাদের মনে আবেদন সৃষ্টি করে। আবেদন এত গভীর ছিল যে সরকারী অনেক নির্যাতন সত্ত্বেও বাঙালিরা আন্দোলন থেকে সরে পড়েনি। তারা আরও বেশি করে সংঘটিত হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে 1970 সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হয়।1971 সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা আসে ছয় দফার ঐক্য থেকে। তাই ছয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা যায়। ছয় দফা সম্পর্কে প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেছেন, ” Infact, the six point formula was a landmark in history of the political change in Pakistan”.
উপসংহার: উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, 1966 সালের 6 দফা বাঙালির জীবনে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কেননা এই ছয় দফার মাধ্যমে সর্বপ্রথম স্বাধিকারের প্রশ্নে সব শ্রেণীর মানুষ যোগদান করে।ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ জাগ্রত হয়।
6.১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।
ভূমিকা: গণঅভ্যুত্থান হলো গণতন্ত্র বাস্তবায়ন ও স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সকল গণবিরোধী শক্তি ও সামরিক আমলাদের কর্তৃত্ব অবসানের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালে পূর্ব বাংলার ছাত্র শ্রমিক কৃষক ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করে তাই ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং স্বাধীনতার জন্য মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছিল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতির জন্য একটি নব দিগন্তের উন্মোচন করেছিল।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি: কোন আন্দোলনই একক কোন কারণের জন্য সংগঠিত হয় না এর পেছনে কিছু সুগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত কারণ থাকে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ঠিক এমন কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ এর জন্যই হয়েছিল নিচে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ গুলো উল্লেখ করা হলো।
৬ দফার প্রভাব : ১৯৬৬ সালের 6 দফা আন্দোলন কে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়ে থাকে এবং ছয় দফাকে বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়। কিন্তু যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক 5 6 ফেব্রুয়ারি লাহোরে ছয় দফা উপস্থাপন করা হয় তখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং তারা 6 দফার অপব্যাখ্যা করে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য: ১৯৪৭ সালে ভারত শাসন আইনের ফলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয় পাকিস্তান দুই ভাগে বিভক্ত হয় পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে কিন্তু দুই পাকিস্তানের মধ্যে চরম মাত্রায় রাজনৈতিক বৈষম্য দৃষ্টিগোচর হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুন্ন করতে থাকে যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।
৬ দফার বাজেয়াপ্তকরণ: পশ্চিম পাকিস্তান কর্তিক হাজার 966 সালের 6 দফা আন্দোলনকে ধূলিসাৎ করার জন্য বিভিন্ন নির্যাতন মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এর প্রতিবাদে 1966 সালের 7 জুন সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট পালন করে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মেনে নিতে পারেননি ফলে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে যার ফলে অনেক সাধারন লোক নিহত ও আহত হয় ফলে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা এর প্রতিবাদ জানানপরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানের।
পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে ভাঙ্গন: দেশ যখন প্রতিবাদের রোষানলে তখন পূর্ব পাকিস্তানের ন্যাশনাল পার্টির মধ্যে বিভক্তি দেখা যায়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির এক দলের নেতা ছিলেন মাওলানা ভাসানী এবং অন্য একটি দলের নেতা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের ওয়ালী খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের নেতা ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সমর্থন করলেও ভাসানী পন্থীরা ছয় দফার বিরোধিতা করে ।ফলে দেশের সর্বত্র ছয় দফা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।এভাবে পূর্ববাংলার রাজনীতিতে ভাঙ্গন দেখা দেয় যা ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের জন্য দায়ী।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা: ছয় দফা আন্দোলন পূর্বপাকিস্তানে ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে ।কিন্তু পাকিস্তানি সরকার ছয় দফার এ জনপ্রিয়তা মেনে নিতে পারেননি ।তাই দেশদ্রোহিতার অজুহাতে শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৩৫ জনকে প্রতিরক্ষা আইনে গ্রেফতার করার জঘন্য পরিকল্পনা করেন স্বৈরাচারী আইয়ুশাসক আইয়ুব । আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মুক্ত করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আন্দোলনে ফেটে পড়ে যার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এস এ রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশাল আদালত গঠন করে ঢাকার বিচারকাজ শুরু হয় । কিন্তু এ মামলার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার আগেই এটি প্রহসনে পরিণত হয়।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য: বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য ছিল সুদূরপ্রসারী কেননা এ আন্দোলনের ফলেই স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নিচে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য উল্লেখ করা হলো।
ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদ: ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির মাধ্যমে বাঙালিরা জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত হয়। এবং এই ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুগঠিত হয়।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার দমন: ১৯৬৯ সালেরষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এর মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয় যে পাকিস্তান সরকার এ মামলা দায়ের করেছিল শুধুমাত্র ছয় দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য।
আমলাদের ক্ষমতা হ্রাস: ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন কেবল আইয়ুব খানের শাসন বিরোধী আন্দোলনই নয় , ক্ষমতাকেন্দ্রিক আমলাদের বিরুদ্ধেও ছিল সুতরাং এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের শক্তি কেন্দ্রিক আমলাদের শক্তি হ্রাস পেয়েছে
গণতন্ত্র পন্থী শাসক হওয়া ও মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করা: ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল এ গনঅভুথানের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ঐক্যবদ্ধ হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় সংগবদ্ধ হয়।
স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রেরণা: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৯৬৯ সালে যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল তা বাংলাদেশ নামের স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার বীজ মন্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল। এই গণআন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জনগণ নারী পুরুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে ছিনিয়ে আনে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা করো l
ভূমিকা: বাংলাদেশ নামটি প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘ সংগ্রাম হয়েছে। আর এই সংগ্রামকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকার তথা মুজিবনগর সরকার গঠন ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকে গতিময়, সুসংগঠিত করা, সারাবিশ্বে এর পক্ষে সমর্থন আদায় ও জাতীয় এবং সমন্বিত রূপ দিতে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।বাঙ্গালীদের মুক্তির প্রতি অনুরাগ সঠিক দিকে প্রভাবিত করে দেশের ভেতরে ও দেশের বাইরে সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা ছিল মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা।
মুজিবনগর সরকার: মুক্তিযুদ্ধকে পরিচালনা ও বেগবান করার জন্য গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার তথা প্রথম সরকার। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হলে ১০ এপ্রিল সরকার গঠিত হয় আর ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নাম রাখা হয় মুজিবনগর। মুজিবনগর সরকারের কার্যকাল ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল।
মুজিবনগর সরকার গঠন: ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়। আর ১০ এপ্রিল অনুমোদন দেয়া হয় ২৬ মার্চ ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা। এ সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথম দিকে মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তর কুষ্টিয়া জেলার মুজিবনগরে স্থাপিত হলেও পরবর্তীতে কলকাতার ৮ নং থিয়েটার রোডে স্থানান্তরিত হয়।
মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ: ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠিত হলেও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয় ১৭ এপ্রিল। কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথ তলার (মুজিবনগর) আম্রকাননে দেশী-বিদেশী ১২৭ জন সাংবাদিক ও কিছু স্বনামধন্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তায় শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় পরিষদের সদস্য অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী।
মুজিবনগর সরকারের লক্ষ্য: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুজিবনগর সরকারের গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একাধিক লক্ষ্যে এ সরকার গঠিত হয়। যথা:একাধিক লক্ষ্যে এ সরকার গঠিত হয়। যথা:
১. আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়নে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা।
২. মুক্তিযুদ্ধকে দক্ষতার সাথে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা।
৩. মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অস্ত্র সরবরাহ।
৪. দেশ-বিদেশে পাকিস্তানের নারকীয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রচার চালানো।
৫. ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৬. আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও বিদেশী রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন।
৭. মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা মুক্তাঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত।
৮. বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদানের বিশ্ব নেতাদের দ্বারা চাপ প্রয়োগ।
৯.ভারতে , সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সহমর্মী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা।
মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভা ও সদর দপ্তর: ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন হয় এবং ১৭ এপ্রিল সরকার শপথ গ্রহণ করলেও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বন্টন হয় ১৮ এপ্রিল। মুজিবনগর সরকারের কাঠামো নিম্নরূপ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান—-রাষ্ট্রপতি।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম— উপরাষ্ট্রপতি
তাজউদ্দিন আহমেদ—- প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা, তথ্য,সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলী, পরিকল্পনা বিভাগ, ইত্যাদি l
খন্দকার মোশতাক আহমেদ—– পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এম. মনসুর আলী—– অর্থ, শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ.এইচ. এম. কামরুজ্জামান—- স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি l
মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম: মুজিবনগর সরকার ১২টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল। মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম সমূহ আলোচনা করা হলো:
১. প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়: মুজিবনগর সরকারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। এস.এ.সামাদ ছিলেন প্রতিরক্ষা এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই সার্বিক মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে।
২.পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: খন্দকার মোশতাক আহমেদ ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এ বিভাগের কাজ ছিল বিদেশে মিশন স্থাপন, বিদেশে কূটনৈতিক তৎপরতা পরিচালনা করা। কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, স্টকহোম প্রভৃতি স্থানে কূটনৈতিক মিশন স্থাপন করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে মাহবুব আলম চাষি দায়িত্ব পালন করেন।
৩.অর্থ,শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়: অর্থ মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের বেতন ভাতা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ে অর্থ প্রদান করত। আর এই অর্থ,শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন এম.মনসুর আলী এবং খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন এ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
৪. মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়: মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তার অধীনে অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়। তাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সচিবালয় দায়িত্ব ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মন্ত্রী পরিষদের নিকট পেশ করা, সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা এবং এসব বিষয় লিপিবদ্ধ করা।
৫.সাধারন প্রশাসন, সংস্থাপন বিভাগ: মুজিবনগর সরকারের এ বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কাজ করতেন সরাসরি। এ বিভাগটি সরকারের সংস্থাপন বিষয়ক কাজ যেমন – প্রবেশন, নিয়োগ, বদলি, পোস্টিং, শৃঙ্খলা, সরকারী নিয়োগের নীতিমালা বাস্তবায়ন, মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর তালিকা সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজ ছিল সাধারন প্রশাসনের দায়িত্বে।
৬. জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল: দেশব্যাপী সুষ্ঠু প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জুলাই মাসে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণাকারী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের আঞ্চলিক প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
৭. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একজন পূর্ণ সচিব নিযুক্ত ছিলেন। তথ্য সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার নিকট সেগুলো প্রেরণ করা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রধান কাজ। এছাড়াও অবমুক্ত এলাকার প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন, ভ্রমণ ডকুমেন্ট ইস্যু করা,তদন্ত পরিচালনা ইত্যাদি কার্যক্রম এ মন্ত্রনালয় পরিচালনা করত।
৮. স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ: প্রাথমিকভাবে একজন মহাপরিচালকের অধীনে গঠন করা হয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ। পরবর্তীতে মহাপরিচালককে সরকারের সচিবের মর্যাদা প্রদান করা হয়। সামরিক বাহিনীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা এবং বেসামরিক চিকিৎসাসেবা ও কল্যাণে নিয়োজিত ছিল স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ।
৯. প্রকৌশল বিভাগ: মুজিবনগর সরকারের এ বিভাগ একজন প্রধান প্রকৌশলীর অধীনে জোনাল ইঞ্জিনিয়ারগণ সেক্টর কমান্ডারদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত ছিলেন।
১০. তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধের খবর এবং পাকবাহিনীর হত্যা ও অত্যাচারের কাহিনী প্রচার করার পাশাপাশি পাকবাহিনীকে ধিক্কার ও বিদ্রুপ করে এম.আর.আখতার মুকুল রচিত ও পঠিত ‘চরমপত্র’ প্রচার করত।
১১. ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ: রিলিফ কমিশনের সংঘটিত একটি বিভাগ হল ত্রাণ ও পূনর্বাসন বিভাগ। এ বিভাগ স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর অধীনে কাজ করতো। এ বিভাগের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হচ্ছে- ত্রাণের জন্য গৃহীত বিভিন্ন আবেদনপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশী নাগরিকদের সাহায্য করা,বাংলাদেশ শিক্ষকমন্ডলীর রিলিফের ব্যবস্থা করা ও উদ্ধার শিবিরে রিলিফ বিতরণ করা।
১২. কৃষি বিভাগ: মুজিবনগর সরকারের এ বিভাগটি পুরোপুরি সংগঠিত ছিল না। কেবল একজন সচিব নিয়োগ করা হয়েছিল, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের নকশা ও পরিকল্পনা তৈরি করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও কয়টি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীন থাকে। যথা:
১. সংসদ বিষয়ক বিভাগ:
২. পরিকল্পনা সেল ও বাণিজ্য বোর্ড:
৩. যুব ও অভ্যর্থনা নিয়ন্ত্রণ বোর্ড:
উপসংহার: পরিশেষে, মুজিবনগর সরকার গঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সফল করা এবং যোগ্য নেতৃত্ব প্রদান করা ছিল এই মুজিবনগর সরকারের প্রধান কাজ। এই সরকারের প্রচেষ্টাতেই মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত। আর এতেই সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।
7.বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপরে একটি নিবন্ধ লেখো।
ভূমিকা: মুক্তিযুদ্ধ হলো একটি জাতি বা গোষ্ঠীর মুক্তি বা স্বাধীনতা লাভের লড়াই। ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের কাঙ্খিত মুক্তি মেলে। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয় একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ, যর নাম বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: বাংলাদেশের স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। এই আন্দোলন তথা মুক্তিযুদ্ধের রয়েছে একটি ঐতিহাসিক পটভূমি। মূলত ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য ডুবে যায়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সাতটি পর্যায়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়। নিম্নে পর্যায় সাতটি আলোচনা করা হলো:
ভাষা আন্দোলন: মূলত একটি জাতির জাতীয়তা বিকাশের প্রধান মাধ্যম হলো ভাষা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা তা বুঝতে পারেনি। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে পরিষদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি জানালে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এর ফলে বাংলায় বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য।
যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন: ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন ছিল মুক্তিসংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পটভূমি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে শাসক দল মুসলিম লীগ কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। ফলে ১৯৫৩ সালের ১৪ ই নভেম্বর পূর্ববাংলার চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে। ২৩৭ টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট প্রায় ২২৩টি আর মুসলিম লীগ মাত্র ৯ টি। মুসলিম লীগ এই লজ্জাস্কর ব্যাপক ভরাডুবি মেনে নিতে না পারে মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বরখাস্ত করে এবং মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হককে গৃহবন্দী করে। এই ঘটনা বাঙ্গালীদের প্রচন্ডভাবে বিক্ষুব্ধ করে তোলে।
সামরিক শাসন: ১৯৫৮ সালের ২৭শে অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান তার পূর্ববর্তী সামরিক শাসক ইস্কান্দার মির্জা কে উৎখাত ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতা দখলের পরে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করত; পূর্বঘোষিত ১৯৫৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন স্থগিত করেন এবং রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন। সামরিক শাসন কে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে তিনি মৌলিক গণতন্ত্র নামে একটি ব্যবস্থা চালু করেন। এবং তিনি বাঙালির ওপর জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে তাদেরকে দীর্ঘ ১০ বছর গোলাম করে রাখেন।
শিক্ষা আন্দোলন: বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল সেই আন্দোলন ই সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতন। এই আন্দোলন আইয়ুব খানের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে রাজনৈতিক শূন্যতা ভেঙে গোটা পরিবেশকে রাজনীতির পক্ষে নিয়ে এসেছিল। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি আইয়ুব খান কর্তৃক গঠিত “শরীফ শিক্ষা কমিশন” আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ একটি রিপোর্ট প্রকাশিত করে। যা আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকার রাজপথে তৎকালীন পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর গুলিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মোস্তফা ওয়াজিউল্লাহ ও বাবুলসহ অনেকে। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত হয় যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর ভিতরে বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।
ছয় দফা: ১৯৬৬ সালের ৫ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অবস্থিত বিরোধী দলের সমাবেশে বাংলার মানুষের মাঝে আইয়ুব বিরোধী যে ভাবনার জন্ম হয় তার পটভূমিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করেন। যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল: ১)লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান ফেডারেশন গঠন। ২) পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিভাগের দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে বাকিগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর নিকটে। ৩) সারাদেশে দুই ধরনের বিনিয়োগ যোগ্য মুদ্রা অথবা শর্তসাপেক্ষে একই ধরনের মুদ্রার প্রচলন করতে হবে। ৪) সকল ধরনের কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে। ৫) অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদেরও অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে। ও ৬) পূর্ব পাকিস্তানে প্যারামিলিটারি গঠন। মূলত এটিই ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। আইয়ুব খান সরকার একে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি হিসেবে আখ্যা দিয়ে ছয় দফা পন্থীদের হুমকি দেন।
গণঅভ্যুত্থান: পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ১৯৬৯ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংগঠিত হয়। যা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে বাঙালি জাতির জাগরণ কে দমন করতে আইয়ুব খান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আশ্রয় নেন। সে মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫ জন উচ্চপদস্থ সরকারি বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়। যার ফলে বাঙ্গালীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ১৯৬৯ সালের দিকে রাস্তায় নেমে আসলে অনেকে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। যার ফলে ২২ শে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু সহ অন্যান্য ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হয় এবং ২৫শে মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এভাবেই ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও পরবর্তী ঘটনা: ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলে ইস্কান্দার মির্জা উক্ত পদে আসীন হয়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন। উক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। কিন্তু পশ্চিমারা সরকার গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে আলোচনার জন্য ভুট্টু ও ইয়াহিয়া ঢাকায় আসেন। কিন্তু আলোচনা অসমাপ্ত রেখে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা একে দিয়ে তারা ঢাকা ত্যাগ করেন। অতঃপর ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর বর্বর হামলা চালু করেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এমএ হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করলে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
উপসংহার: উপরোক্ত ঘটনাবলী বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রদানে বিশাল ভূমিকা রাখে। পরিণতিতে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ৩০ লক্ষ শহীদ, বহু মা-বোনের সম্ভ্রম, দেশ বরন্য বুদ্ধিজীবীদের তাজা প্রাণ ও দেশের অবকাঠামোর এক ধ্বংসস্তূপের ওপর ভিত্তি করে পেয়েছি আমাদের এই স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ।
7.স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয়ে ১৯৭০ সালে নির্বাচনের গুরুত্ব আলোচনা কর?
অথবা, ১৯৭০ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে 1970 সালের নির্বাচনের প্রভাব আলোচনা করো?
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে 1970 সালের নির্বাচনে রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরো?
অথবা, ১৯৭০ নির্বাচন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে কি ভূমিকা পালন করেছিল?
ভূমিকাঃ বাংলাদেশের মানুষের জীবনে ১৯৭০ সালের নির্বাচন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী নির্বাচন। এই নির্বাচনে জয় লাভ করে বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনার সৃষ্টি। এ বিজয় ছিল ২৫ বছরের পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন ও শোষনের হাত থেকে বাঙ্গালি জাতির মুক্তির বিজয়। আর এ নির্বাচনের ফলে বাঙ্গালি জাতির আশা আকাঙ্খা মূ্র্ত প্রতীকরূপে আত্নপ্রকাশ ঘটে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ভূমিকা: এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ । এই স্বাধীনতার পিছনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে ১৯৭০ সালের নির্বাচন যেভাবে বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার চেতনায় অনুপ্রাণিত করেছিল তা নিচে আলোচনা করা হলো।
বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের চেতনার বিজয় : বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদ এর উন্মোচন হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। যার ফলস্বরূপ বাঙ্গালি জাতি ১৯৭০ সালে জাতীয়তাবাদ রাজনৈতিক ও গনতান্ত্রিক ভিত্তি লাভ করে এই নির্বাচন থেকে। এটার সব থেকে বড় ও সফল উদাহরণ হলো ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় । এটা প্রকাশ করে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদেরই বিজয়।
পাকিস্তান শাসন হতে মুক্তি লাভ: ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পরে এই পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) শাসন ক্ষমতা ছিল পাকিস্তানিদের হাতে। এই নির্বাচনে জয়লাভের মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতির আকাঙ্খা জাগে স্বাধীনতা পাওয়ার। আর আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের সত্যিকারের প্রতিনিধি তা বিশ্ববাসীর চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠে। ফলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জন্য জনসমর্থন সহজ বিষয়ে পরিণত হয়।
বাঙ্গালি জাতির আত্মনির্ভরশীলতার সৃষ্টি: ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ঐক্য আরো জোরদার হয়েছিল। আর এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর জয় ছিল বাঙালি জাতির আত্মনির্ভরশীল গড়ে ওঠার জয়।
পাকিস্তানীদের শাসনের মৃত্যু: ১৯৭০ সালের নির্বাচন হলো পাকিস্তানীদের বিদায় ঘন্টা। পূর্বপাকিস্তানের আসন সংখ্যা ছিল ১৬৯ টি এর মধ্যে আওয়ামী লীগ লাভ করে ১৬৭ টি। অন্যদিকে পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এখানে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হতে চায়। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষরা রাজনৈতিক অধিকার চায়। সুতরাং ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আপামর জনসাধারণ বুঝতে পারে যে পাকিস্তানের শাসন শোষণের দিন শেষ বাঙালিরা এবার স্বাধীনতা পাবে।তাই তারা 1971 সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার একটি দল। আর এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নির্বাচনে জয়লাভের পর বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।
জাতির ভিন্নতার প্রকাশ : ১৯৭০ সালের নির্বাচন প্রকাশিত করে পাকিস্তান রাষ্ট্রতে ঐক্যের কোন ভিত্তি নেই। দুই অংশের জনগণের মনমানসিকতা ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা বা ভিন্ন। এটা প্রকাশ করে জাতির ভিন্নতা।
সংগ্রামী মনোভাব এর সৃষ্টি: ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাঙালি জাতির মধ্যে সংগ্রামী মনোভাব সৃষ্টি করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়টা আরো বাড়িয়ে তুলে সংগ্রামী মনোভাব।
স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল প্রেরণা শক্তি: ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল প্রেরণা শক্তি হিসেবে কাজ করে পূর্ব বাংলার আপামর জনগণের মাঝে। তারা স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। সত্তরের নির্বাচন বাঙালি জাতির মধ্যে এভাবে অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করে।
পাকিস্তানের আশা ধূলিসাৎ: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের আশাকে ধূলিসাৎ করে দেও। পাকিস্তানিরা মনে করেছিল যে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্টতা না পেয়ে অন্য দলের সাথে জোট করবে। তার ফলে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন দুর্বল হবে। আর এদিকে ঘটলো তার ঠিক উল্টো। আর এর ফলে পাকিস্তানের আশা ধূলিসাৎ এ পরিণত হলো
ছয় দফাকে স্বীকৃতি দান : ১৯৬৬ সালের ছয় দফাকে বাঙ্গালির মুক্তির সনদ বলে বিবেচিত করা। এটা কে আবার ম্যাগনাকার্টার সাথে তুলনা করা হয়েছে। আবার আওয়ামী লীগ তারা ৬ দফাকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বলে ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালের এই বিজয় কে তুলনা করা হয় ৬ দফার সাথে। আর এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালিরা ছিনিয়ে আনে প্রাণের স্বাধীনতা।
স্বচ্ছ ও পরিশুদ্ধি নির্বাচন: ১৯৭০ সালের নির্বাচন হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কারণ হলো এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন কোন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করায় এ নির্বাচন ছিল স্বচ্ছ পরিশুদ্ধি নির্বাচন। আর এই সুষ্ঠু নির্বাচনের ফলে বাঙালি জাতি সাহস পেয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান দিতে।
স্বাধীন দেশের স্বপ্ন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের জয় লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় তাহলো বাংলাদেশ হবে স্বাধীন এবং এদেশের জনগণ হবে স্বাধীন।
শোষণের হাত থেকে মুক্তি: এই নির্বাচনের পরে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বপ্ন দেখেছে যে তারা আর নিপিড়ীত হবে না পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকের হাত থেকে।
বৈষম্য থেকে মুক্তি: ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর বাঙালি জাতি স্বপ্ন দেখে তারা মুক্তি লাভ করবে বৈষম্য এর হাত থেকে। পূর্ব পাকিস্তানের কাচামাল সল্পদামে ক্রয় করে পরে ওই মালের উৎপাদিত পণ্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ক্রয় করতে হতো অনেক দামে। তারা এ ধরনের বৈষম্য হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার স্বপ্ন তারা দেখেছিল।
সংবিধানের সৃষ্টি: সংবিধান একটি জাতিকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য ও দেশ পরিচালনা করার জন্য খুব দরকারী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাঙ্গালি জাতি সংবিধান বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হযেছিল। যার ফলে আমরা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর পেয়েছি অমূল্য রত্ন সংবিধান।
স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে বাঙ্গালীদের মধ্যে এক অদম্য শক্তি সঞ্চারিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার সোনালী ঊষা । সৃষ্টি হয় নতুন এক স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ বাংলাদেশ।
উপসংহারঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাঙ্গালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার নির্বাচন। এ নির্বাচন যদি না হতো তাহলে হইতো আজও বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না আর আমরাও স্বাধীন বাংলাদেশে দেখতাম না। তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল বাঙালি জাতির কাছে সুদূরপ্রসারী নির্বাচন।
8.বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তি বর্গের সম্পর্কে আলোচনা করো
ভূমিকাঃ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র,এই স্বাধীনতার পিছনে রয়েছে আত্মত্যাগ ও নাটকীয়তা ।বাংলাদেশের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পেছনে রয়েছে মৈত্রীপক্ষ ও বিরোধী পক্ষ। বাংলাদেশের মৈত্রীপক্ষ হিসাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত আর বিরোধী পক্ষ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ।
বৃহৎশক্তিধরের ক্ষমতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে : বিশ্বের দুটি পরাশক্তি রাষ্ট্র হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করে অপরটি অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের পক্ষে যোগদান করে। নিচে এই বৃহৎ শক্তিসমূহের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো তাই বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক হতাশাব্যঞ্জক হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতাবিরোধী ছিল। তবে তৎকালীন রোজার্স ও কিসিঞ্জার প্রশাসন পুরো নয় মাস ধরে পাকিস্তানের জন্য নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সমর্থন যুগিয়েছেন। আর সাধারনত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন নীতির চারটি পর্যায়ে ছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পর্যায়: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পর্যায়ে দেখিয়েছে কৌশলগত দিক থেকে নিরপেক্ষতা। এ সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত করে ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় পর্যায়: এ পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল নীতি ছিল অখন্ড পাকিস্তান সৃষ্টি করা। পাকিস্তানের অধীনে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা এবং যুদ্ধ এড়িয়ে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ পর্যায়: চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র প্রচন্ড ভারত বিদ্রোহী ও পাকিস্তান ঘেষা নীতি অনুসরণ করতে থাকে। এর ফলে দিল্লি ও মস্কের উপর চাপ প্রয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারপ্রাইজ নামে একটি জাহাজের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স যুদ্ধজাহাজ বঙ্গোপসাগরে পাঠানোর নির্দেশ দেয় । এটা টাক্সফোর্স ৭৪ নামে পরিচিত । তবে জাতিসংঘের সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভটোর কারণ ১৯৭২সালের ৮জানুয়ারি মার্কিন টাক্সফোর্স ৭৪ ভারত মহাসাগর ত্যাগ করে। যদিও মার্কিন সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে বিরোধিতা করেন তারপরও মার্কিন বুদ্ধিজীবীরা ,সংবাদপত্র রাজনীতিবিদসহ, বেসরকারি পর্যায়ের মানুষ জন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন। নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হ্যারিসনের “বাংলাদেশ কনসার্ট” মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা: আরেকটি শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্যতম ।আর সোভিয়েত ইউনিয়ন বাঙ্গালীদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন করেছিলেন এবং বাঙালি দের হত্যাকাণ্ড বা গণহত্যাকে প্রথমে নিন্দা জানিয়ে ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম পর্যায়: সেই সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদগর্নি 2 এপ্রিল ইয়াহিয়া খানকে পত্রযোগে জরুরী ভিত্তিতে রক্তপাত ও নির্যাতন বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করার আহ্বান জানান ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় পর্যায়: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় পর্যায় সংগঠিত হয়েছিল জুলাই থেকে নভেম্বরের মাঝে।1971 সালের 9 আগস্ট স্বাক্ষরিত হয় রুশ ভারত মৈত্রী চুক্তি পাকিস্তানকে নৈতিকভাবে দুর্বল করে দেয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৃতীয় পর্যায়: স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে সংগঠিত হয়েছিল ৩ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে 3 ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ সংঘটিত হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি চীন কে দোষী সাব্যস্ত করে। এবং বলেন তাদের সীমান্ত রক্ষা ও জাতীয় স্বার্থে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিষ্ক্রিয় থাকবে বলে হুমকি দেয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের ভূমিকা: স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের ভূমিকা ছিল বাংলাদেশ এর বিপরীত দিকে। নিচে তা আলোচনা করা হলো:
স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের প্রথম পর্যায়: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের প্রথম পর্যায়ে সংগঠিত হয়েছিল এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মাঝে। এ সময় চীন সরকার পাকিস্তানের এই ঘটনাটি একটি অভ্যন্তরীণ ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং পাকিস্তানকে সামরিক ও নৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের দ্বিতীয় পর্যায়: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দ্বিতীয় পর্যায়ে চীন ভারত রাশিয়া পাশাপাশি বাংলাদেশের বিরোধিতা করতে থাকেন জাতিসংঘে এবং 16 ডিসেম্বর বাংলাদেশে স্বাধীন হলে চীন মন্তব্য করে যে বাংলাদেশকে রুশ-ভারত সৃষ্টি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান: কিছু গবেষক মনে করেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহায়তা করার পিছনে দুই ধরনের মত রয়েছিল। এক পক্ষের মত ছিল ভারত তার জাতীয় স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল । আর অন্য পক্ষ বলেছিল মানবিক দিক থেকে এই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের প্রথম পর্যায়: এ পর্যায়ে ভারত সরকার বাংলাদেশের সরকারকে যুদ্ধ করার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেন না। তবে বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের জন্য তাদের সীমানা খুলে দেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের দ্বিতীয় পর্যায়: এ পর্যায়ে জুলাই মাস থেকে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি নিয়মিত ধ্বংস করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের তৃতীয় পর্যায়: এ পর্যায়ে ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে বলে স্বীকৃতি প্রদান করে।
উপসংহার; উপরের সমস্ত আলোচনা থেকে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে রয়েছে বহির্বিশ্বের বিশেষ অবদান। সেই সময় এ দুটি বৃহৎ পরাশক্তি রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান করে এবং মার্কিন রাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে অবদান রাখে। চীনযদিও বাংলাদেশের বিরোধিতা করে তারপরও ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশ একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে 16 ই ডিসেম্বর মাথা তুলে দাঁড়ায়।
10.বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা আলোচনা কর ।
অথবা, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরো ।
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধর ।
অথবা, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ রচনা কর ।
ভুমিকাঃ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অনন্য নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালিদেরকে অদম্য সাহস জোগান এবং বাঙ্গালিরাও তাঁকে অন্ধের মত অনুসরণ করে। তাঁর দক্ষ, যোগ্য ও সম্মোহনী নেতৃত্বে সমগ্র বাংলা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পরে এবং স্বাধীনতা অর্জন করে। এজন্যই এদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অপরিহার্য।
স্বাধীন বাংলাদেশের উদয়ে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বাংলাদেশের জন্ম পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল অপরিহার্য। তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য তিনি প্রায় ২৩ বছর আন্দোলন চালিয়েছেন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিচে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা আলোচনা করা হলো-
একাত্মতা সৃষ্টি
পাকিস্তান শাসনামলে এদেশের মানুষদের মধ্যে একাত্মতার করুন অভাব দেখা দেয়। তখন বঙ্গবন্ধু একজন আলোকবর্তিকাবহনকারী হিসেবে বাঙ্গালিদের মধ্যে উক্ত সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। তিনি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে একত্রিত করে একাত্মতার পতাকাতলে সমবেত করেন।
আপসহীন নেতৃত্ব: বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, বঞ্চিত নিরীহ বাঙ্গালির ন্যায্য অধিকার আদায়ে তিনি আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যান। অন্যায়ের কাছে তিনি কখনও মাথা নত করেননি। তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অপূর্ব বাচনভঙ্গি, অদমনীয় কর্মস্পৃহা তাঁকে অসাধারণ চরিত্রের অধিকারী করে তোলে এবং তিনি তাঁর উক্ত প্রতিভার দ্বারা তৎকালীন পূর্ব বাংলায় নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং দেশকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
’৫২-র ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন স্বরূপ । ভাষা আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন এবং কারাগারে থাকা অবস্থায় অনশন ধর্মঘট পালন করেন। তিনি বাঙ্গালির ভাষার অধিকার আদায়ে অনন্য ভুমিকা পালন করেন।
’৫৪-র নির্বাচন বিজয়ে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা: ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়ী হয় যেখানে মুসলিমলীগের হয় শোচনীয় হার। যদিও এ কে ফজলুল হক যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে ছিলেন, কিন্তু নির্বাচনের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর পরই বঙ্গবন্ধু মুল নেতৃত্বে চলে আসেন এবং মন্ত্রীসভায় কৃষি, বন ও সমবায়মন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন। পূর্ব বাংলার নিরীহ মানুষদের অধিকার রক্ষায় তিনি পাক-সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধাচারন করেন।
ছয় দফা দাবি: ছয় দফা দাবি বাংলার ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারন এটি ছিল বাঙ্গালির মুক্তির সনদ ও প্রানের দাবি। বাংলার সকল মানুষ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবিকে সমর্থন করে জোরালো আন্দোলন শুরু করে । এতে পাকিস্তান সরকার ভীত-শন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং এই ছয় দফা দমনের জন্য বাঙ্গালিদের উপর অত্যাচার চালায়। এক সময় তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। এতে পূর্ব বাংলার ছাত্রজনতা আরোও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। উক্ত ছয় দফা দাবির জনপ্রিয়তার ফলে বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন ।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু: আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান সরকার বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগে পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর আওয়ামী লীগ পার্টির ভূমিকা ছিল অন্যতম।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা: ছয় দফা আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে অবিহিত করে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ আরোও ৩৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে যেটি ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে পরিচিত। এই মামলায় বঙ্গবন্ধুকে আটক করলে গোটা পূর্ব বাংলার সকল জনতা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে । যার ফলে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার অনন্য নেতা।
আইয়ুব খানের পতনের জন্য গণআন্দোলন: বাংলার ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনটি ১৯৬৯ সালে ঘটে এবং এর ফলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের দিকে আরোও এক ধাপ এগিয়ে যায়। একই সাথে এই আন্দোলন বঙ্গবন্ধুকে আরোও জনপ্রিয় করে তোলে।
বঙ্গবন্ধুর অবদানে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি : বঙ্গবন্ধুর দরদী ও বিচক্ষণ কার্যকলাপের জন্য পূর্ব বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতা তাঁকে খুব ভালোবাসতো। মূলত আইয়ুব খানের পতন ছিল বাঙ্গালির প্রানের দাবি ‘ছয় দফা দাবি’-র বিজয় । ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু কারাগার হতে মুক্তি লাভ করলে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
’৭০-র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব: ১৯৭০ সালের নির্বাচন পাক-সরকারের পতনের অন্যতম কারন ছিল । বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। ৭০-এর এই বিজয় পূর্ব বাংলার মানুষদের আন্দোলনকে আরোও জোরালো করে তোলে । আর এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মূল হোতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
অসহযোগ আন্দলনের ডাক: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় দেখে পাক-সরকার তুলনামূলক আরোও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে, যেমন- আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাওয়া, অকারনবশত সময় নষ্ট করা ইত্যাদি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এতে বিচলিত না হয়ে ছয় দফায় উল্লেখিত দাবিতেই অটুট রইলেন। ফলে পরিস্থতি আরোও জটিল হয়ে পড়লো। কোনো উপায় না পেয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে। এহেন পরিস্থিতে বঙ্গবন্ধু পাক-সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দলনের ডাক দেন এবং তাঁর ডাকে পূর্ব বাংলার আপামর জনতা একযোগে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা: সকল বাঁধা কাটিয়ে শেষ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধেও বঙ্গবন্ধু তাঁর অনন্য দক্ষতার পরিচয় দেন। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে তিনি ভাষণ দেন । ভাষণে তিনি বাঙ্গালির মুক্তির নির্দেশনা দেন, সেই সাথে নির্দ্বিধায় মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা: ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাক-হানাদার বাহিনী যখন নিরিহ-নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর হত্যাযজ্ঞ চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর উক্ত ঘোষণার পর বাংলার সংগ্রামী জনতা দেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদিকে স্বাধীনতার ঘোষণার পরপরই রাত প্রায় ১ টা ১০ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর অনুপস্থিতি স্বত্বেও তাঁর দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। ফলক্রমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।
উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে এটা বলাই যায় যে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উদয়ে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও নেতৃত্ব বর্ণনাতীত। বাংলার মানুষের মুক্তি ও অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন এবং পাক-সরকার কর্তৃক নির্যাতনের স্বীকার হন। তাঁর অবিচলিত ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং যোগ্য ও কার্যকরী পদক্ষেপসমূহ এক নতুন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দেয় ।
11.১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব ব্যাখ্যা করো।
ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসন এর জন্য ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ভারতের দীর্ঘমেয়াদী ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব একটি অনন্য সাধারণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
লাহোর প্রস্তাব: ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ অবিভক্ত পাঞ্জাবের রাজধানীর লাহোরের মুসলিম লীগের এক অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মুসলমানদের অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেন ইতিহাসে এই প্রস্তাবকে লাহোর প্রস্তাব বলা হয়। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৪ শে মার্চ লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয় কিন্তু শেরে বাংলা একে ফজলুল হক যখন লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন এ প্রস্তাবের কোথাও পাকিস্তান শব্দটি উল্লেখ ছিল না কিন্তু তৎকালীন সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচারের কারণে লাহোর প্রস্তাব পাকিস্তান প্রস্তাব নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি: ১৯৩৭ সালের প্রথমদিকে ভারতের প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ।এ নির্বাচনে ভারতীয় কংগ্রেস দল ৬ টি প্রদেশে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । মুসলিম লীগ কংগ্রেসের সাথে যুক্ত হয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব করলে কংগ্রেস তা অস্বীকার করে। বাংলা ও পাঞ্জাবের সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠন করে কিন্তু কংগ্রেস ১৯৩৭ সালের জুন মাসে এককভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করে। মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়। এই জঘন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামায় হিন্দু-মুসলমান স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় মুসলমান নেতৃবৃন্দ নিজেদের ভাগ্য সম্পর্কে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩শে মার্চ অবিভক্ত পাঞ্জাবের রাজধানীর লাহোরের মুসলিম লীগের এক অধিবেশনে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
লাহোর প্রস্তাবের ধারা: চারটি ধারা গুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো:
ক) ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্ব ভূভাগের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোকে নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহ গঠন করতে হবে।
খ) এসব স্বাধীন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অঙ্গ রাষ্ট্রগুলো সাহিত্য শাসিত এবং সার্বভৌম হবে।
গ) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর সাথে পরামর্শ করে তাদের সব অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য সংবিধান সংবিধানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ঘ) প্রতিরক্ষা পররাষ্ট্র যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকবে।
লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব: লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রিটিশ ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় দীর্ঘ দিন ধরে চলা হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা বিরাজমান ছিল । লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই দাঙ্গা-হাঙ্গামা এক নতুন মোড় নেয় ।লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব আলোচনা করতে হলে কিছু সুনিয়ন্ত্রিত বিষয়ে আলোচনা করতে হবে এগুলো নিচে দেওয়া হল।
রাজনৈতিক চেতনা বিকাশ: ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ অখন্ড বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক যে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করে এতে করে ভারতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটে। ভারতীয় রাজনীতি দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে মুসলিম প্রধান রাজনীতি এবং হিন্দুপ্রধান রাজনীতি।
মুসলিম জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি: শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাব ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সূচনা করে। এ প্রস্তাবের ফলে মুসলমানেরা বুঝতে পেরেছিল যে তারা একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং তাদের চিন্তাধারা বাংলার চেতনাবোধ সবকিছুই স্বতন্ত্র।সুতরাং লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে মুসলিম জাতীয়তা বোধের সৃষ্টি হয়।
মুসলিম লীগের প্রভাব: লাহোর প্রস্তাবে মুসলমানদের জন্য পৃথক একটি রাষ্ট্র গঠনের দাবি করার জন্য মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে নব দিগন্তের উন্মোচন হয় যার ফলে মুসলিম লীগের প্রভাব ও প্রতিপত্তি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ মোট ৪৮২ টি আসনের মধ্যে ৪২৩ টি আসন লাভ করে এবং এ নির্বাচনে মুসলিম লীগ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। যার মূলে ছিল লাহোর প্রস্তাব।
লাহোর প্রস্তাবের ফলাফল: লাহোর প্রস্তাবের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। লাহোর প্রস্তাবের ফলে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের দাবি করা হয় এবং তার ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। লাহোর প্রস্তাবের বেশ কিছু ফলাফল লক্ষ্য করা যায় সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
ভারত ভাগ: ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের পূর্ব পর্যন্ত মুসলিম লীগ এবং কংগ্রেস যৌথভাবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন করে কিন্তু ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর থেকে মুসলিম লীগ মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের কথা বলে এবং লাহোর প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত ভারতকে বিভক্ত করতে সক্ষম হয়। যার ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ ই আগস্ট ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে লাহোর প্রস্তাব ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। লাহোর প্রস্তাবের ফলে পাকিস্তান এবং ভারত নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয় । এতে হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে তিক্ত অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয় যার রেশ এখনো বিরাজমান।