আজকে আমরা সিভিল ডিসবিডেন্সের সামারি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং এনালাইসিস করব। সিভিল ডিসবিডেন্স লিখেছেন Henry David Thoreau । এখানে মূলত পান ব্যবহার করা হয়েছে।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে পান বলতে আসলে খাওয়ার পান বোঝানো হয়েছে নাকি অন্য কিছু। আসলে এমন কিছুই নয় বরং এটি এক ধরনের লিটারারি ডিভাইস যার ইংরেজিতে উচ্চারণ হচ্ছে pun। পান হল এমন এক ধরনের লিটারারি টেকনিক যার মাধ্যমে চতুরতার সাথে কিছু শব্দ বা ফ্রেজ এর ব্যবহার করা হয় এবং সেই সকল শব্দ বা ফ্রেজের একাধিক অর্থ থাকতে পারে যদিও সেগুলোর উচ্চারণ একই।
লেখক মূলত এখানে কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন যার মধ্যে অন্যতম হলো
- একটা দেশের সরকার কেমন হওয়া উচিত বা সরকারের কার্যকারিতা কি হওয়া উচিত
- ভোটিং সিস্টেম জনগণের সংগ্রাম কিংবা সরকারের কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করার অধিকার
- এবং শান্তিপূর্ণ বিপ্লব।
Civil Disobedience- এই টাইটেল দ্বারা মূলত বোঝানো হয়েছে সিভিল ডিসবিডেন্স সোসাইটি বা চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি তাদেরকে। দেশ ওবিডেন্স অর্থাৎ অনানুগত্যতা। চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী যখন সরকারের কোন বিষয়ে নারাজ হয়ে কিংবা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে অনানুগত্যতা প্রকাশ করে তখন সেটা সিভিল ডিসবিডেন্স ডিস অভিডেন্টস কিংবা শান্তিপূর্ণ বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
Notes: Civil Disobedience
এই লেখাটির দ্বারা ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক নামকরা রাজনীতিবিদরা প্রভাবিত হয়েছেন। সিভিল ডিসবিডেন্সের লেখক David Thoreau শুরুতেই সরকার সম্পর্কে একটা সম্মখ ধারণা দিয়েছেন। তার মতে সেই সরকার হল সবচেয়ে উত্তম সরকার যে সরকার সবচেয়ে কম শাসন করে। তিনি আরো বলেছেন যে জনগণের জন্য সবচেয়ে উত্তম সরকার হলো সেই সরকার যে সরকার কখনো শাসনই করে না।
এখানে শাসন করে না বলতে বোঝানো হয়েছে যে সরকার কোন শাসক গোষ্ঠী নয় বরং জনগণের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী একটি সংস্থা যারা জনগণের জন্য কাজ করবে। সর্ব উত্তম সরকার জনগণ পাবে কিনা সেটা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে জনগণ এ ধরনের সরকার পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে কিনা তার ওপরে।
অর্থাৎ সরকার হবে এমনটা যে দেশের সার্বিক কার্যক্রম জনগণের ওপর নির্ভর করবে এবং জনগণ তাদের নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সেই কার্যক্রম গুলো বাস্তবায়ন করবে।
1948 সালে যখন আমেরিকান এবং মেক্সিকান যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন লেখক একাই। তার বিরুদ্ধাচরণের একটি বহিঃপ্রকাশ ছিল ট্যাক্স না দেওয়া এবং তিনি নিজে এটা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে বর্তমান সরকারের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট নয় যার কারণে ট্যাক্স প্রদান করছেন না।
আর এই ট্যাক্স না দেওয়ার কারণে তাকে এক রাতের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। তার এই কারাবরণ ছিল তার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অত্যন্ত পরিবর্তনশীল। কারাগারে অবস্থানকালে তিনি কারাগারের জানালা দিয়ে বাহিরের যে আবাসিক এলাকাগুলো ছিল তাদের মধ্যকার মানুষদের কথাবার্তা শুনছিলেন এবং বাইরের মানুষদের সম্পর্কে আগের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছিলেন।
আমরা আমাদের আশেপাশে দেখতে পাই যে যখন আশেপাশের চায়ের দোকানে কিংবা ঘরোয়া ভাবে রাজনৈতিক বা অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলতে থাকে তখন একেবারে খুঁটিনাটি ও সত্য বিষয়গুলো উঠে আসে।
David Thoreau ঠিক এমন কিছু আলোচনা কারাগারে থাকা অবস্থায় শুনেছিলেন এবং যা তার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণরূপে আলাদা করে ফেলেছিল।
Henry David Thoreau এর মতে তার এ কারাগরণ শুধু এক রাতের কারাবরণ নয় বরং তার মনে হয়েছে যে তিনি দূর কোন দেশে এই এক রাতের মধ্যে ঘুরে এসেছেন এবং অনেক অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা লাভ করেছেন যা তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সহায়তা করেছে।
এমনকি কারাগার থেকে বের হওয়ার আগে মানুষের প্রতি তিনি যেমন আচরণ করতেন কিংবা মানুষ তার প্রতি যেমন আচরণ করতো কারাগার থেকে বের হওয়ার পর এমনটা হচ্ছে না।
সে সময় একটা কালচার ছিল যারা কারাগার থেকে বের হয়ে চলে আসতো তাদেরকে মানুষ হাত গুছিয়ে মাথা নিচু করে সম্মান প্রদর্শন করত।। কিন্তু Henry David Thoreau কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কেউই তার প্রতি তেমন করছেন না। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার একজন কারাগারের সহবাসী বা প্রতিবেশী ছিল যাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল শস্য ক্ষেতে আগুন দেওয়ার কারণে।
কারাগারে ঢোকার পর জেলার সাহেব যখন তার প্রতিবেশীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তখন সেই শস্য খেতে আগুন দেওয়া ব্যক্তি David Thoreauকে কারাগারের বিভিন্ন নিয়মকানুন শেখাতে লাগলেন যেমন সকালের ব্রেকফাস্ট এর কিছু অংশ যদি বেঁচে যায় তবে সেটা রেখে দিতে হয় যাতে করে দুপুরে সেটা আবার খেতে পারেন। কারণ কারাগারে খাবারের পরিমাণ এতটাই অল্প দেওয়া হয় যে সকালের ব্রেকফাস্ট এর বেঁচে যাওয়া অংশ দুপুরে কাজে লাগে।
তাছাড়া কারা কারা যাওয়ার পর তিনি দেখতে পেলেন যে ভেতরে অন্যান্য যে সকল কয়েদী রয়েছে তারা সবাই সেখানে আড্ডা মজা মাস্তি করার জন্য নিজেদের মতো করে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে নিয়েছেন এবং সবাই মিলে একে অপরের সাথে গল্প গুজবে মেতে রয়েছেন।
এখানে David Thoreau সরকারের আরো একটি বিষয় তুলে ধরেছেন যে সরকার তাকে যখন শারীরিকভাবে শাস্তি দেওয়ার জন্য বা বাধা দেওয়ার জন্য কারবরণ করলো তখন সরকারের ভাবা উচিত ছিল যে একজন মানুষকে কারাবন্দি করলেই তার মনকে কিন্তু বন্দি করা যায় না। তিনি কারাগারে এসে আকাশের চাঁদকে যত সুন্দর ভাবে দেখতে পারছেন বাইরে থেকে কখনো এমন সুন্দর ভাবে দেখেননি।
তাছাড়া সরকার সব সময় নাগরিকদের শারীরিকভাবে বাধাগ্রস্ত করতে চায় কিন্তু কখনো সে মানুষের অথবা নাগরিকদের বিচক্ষণতার মুখোমুখি হতে পারেনা এবং চায়না।
David Thoreau এর মতে সরকার যখন একটি দেশের জন্য কোন আইন প্রণয়ন করে তখন সেটি মেনে চলা এবং তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। কিন্তু সেই আইন যদি দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যায় কিংবা নৈতিকতার বিরুদ্ধে চলে যায় তখন সেটি মেনে চলা আর নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
যদি এমন কোন আইন প্রণয়ন করা হয় তবে জনগণ চারটি উপায়ে তার মুখোমুখি হতে পারে যেগুলো হল
- জনগণ নির্দ্বিধায় সেটি মেনে নিতে পারে
- সেটির সংশোধনের জন্য চেষ্টা করতে পারে
- সম্পূর্ণরূপে সেই আইন প্রত্যাখ্যান করতে পারে
- এবং সর্বশেষ যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই আইন সংশোধন হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সেগুলো মেনে চলতে পারে।
লেখক এর মতে আইন প্রণয়ন করার সময় সরকারের সাথে কিংবা আইনের স্বার্থে তার মধ্যে অনেক অসংগতি থাকতে পারে যেগুলো সম্পূর্ণরূপে জনগণের জন্য মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়। আইন যদি নৈতিকতার বিরুদ্ধে যায় তবে তা জনগণ নির্দ্বিধায় প্রত্যাখ্যান করতে পারে এবং সেই অধিকার জনগণের রয়েছে।
তাছাড়া আরো বলেছেন যে গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যে দল সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী সাধারণত সেই দল সরকার গঠন করে থাকে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সেই দল যা বলবে তাই সঠিক কিংবা তারা সঠিক পথে রয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি নিয়মকানুন ও আইনের ঊর্ধ্বে নৈতিকতা এবং সচেতনতাকে স্থান করে দিয়েছেন।
David Thoreau তার এই লেখায় ভোটিং সিস্টেম নিয়েও সমালোচনা করেছেন। তার মতে একটি দেশের ভোটিং সিস্টেম হল একেবারে পাশা খেলার মত। এটা অনেকটা ভাগ্য এবং দাপটের ওপর নির্ভর করে। তিনি আগেই বলেছেন যে একটি দেশে যে দল সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী সেই দল সরকার গঠন করবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং নৈতিকভাবে শক্তিশালী হলে যে একজন ব্যক্তি ভোটে জয়লাভ করবেন ব্যাপারটা এমন নয়।
কারণ শক্তিশালী দলগুলো সব সময় নৈতিকতার আশ্রয় না নিয়ে তারা তাদের শক্তির প্রদর্শনপূর্বক ভোটিং সিস্টেমটাকে পরিচালিত করে থাকে।
David Thoreau রেবেলিউশন এবং বিপ্লব সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন। এগুলো হচ্ছে একটি দেশের যেকোনো মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে এবং বিপ্লবের দাগ দিতে পারে। এই অধিকার দেশের প্রত্যেকটি মানুষের রয়েছে।
এখানে David Thoreau পেলের একটি বিখ্যাত উক্তি রেফারেন্স হিসেবে প্রদান করেছেন। পেলে তার প্রিন্সিপলস অফ মোরাল এন্ড পলিটিকাল ফিলোসফি গ্রন্থে বলেছেন যখন একটি দেশের সরকার সেই দেশে স্থায়ী হয়ে যায় এবং জনগণের দ্বারা সেই দেশের সরকারকে উৎখাত করা কোনভাবেই সম্ভব হয় না তখন জনগণের উচিত সে সরকারের আনুগত্য করা এবং সরকারের সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। কারণ সেই সরকার তখন সেই দেশের জনগণের সামঞ্জস্যকার হিসেবে কাজ করে থাকে। কিন্তু David Thoreau তার এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন এবং বলেছেন যে যে সরকার নিজেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নৈতিক স্থলনে ব্যস্ত সেই সরকার কিভাবে জনগণের সামঞ্জস্যকারী হিসেবে কাজ করতে পারে?
David Thoreau একটি দেশের ট্যাক্স সিস্টেম নিয়েও সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে সরকার অনৈতিকভাবে জনগণের ওপর উচ্চমাত্রায় ট্যাক্স এর বোঝা চাপিয়ে দিয়ে থাকে। এই ট্যাক্স সিস্টেমের ফলে দেশের যারা ধনী শ্রেণি রয়েছে তারা আরো ধনী হয়ে যায় এবং যারা গরি ব মানুষ রয়েছে তাদের ওপর একটা চাপ চলে আসে যার ফলে তাদের আর্থিক ক্রাইসিস দেখা দেয়।
তো পরিশেষে বলা যায় যে David Thoreau তার সিভিল ডিসবিডেন্স লেখাটি আসলে বক্তৃতা আকারে দিয়েছিলেন। কারণ আমরা আগে জেনেছি যে তিনি ট্যাক্স না দেওয়ার কারণে এক রাতের জন্য কারাগারে ছিলেন এবং সেখান থেকেই তার দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই বক্তৃতার মাধ্যমে।
For Hand Notes: 01706711622
outstanding work sir.
I am from Gaibandha Govt College. Masters session :2020-21