শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত একটি নাটক হল হ্যামলেট। হ্যামলেট নাটকের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে মারা যাওয়া চরিত্র ডেনমার্কের রাজা হ্যামলেটের প্রতিশোধ পরায়ণতার চিত্র থেকে।
নাটকের শুরুতেই আমরা দেখতে পাই যে ডেনমার্কের রাজপ্রাসাদের দুইজন প্রহরী প্রাসাদের প্রধান ফটক পাহারা দেওয়ার সময় একটি প্রেতাতাকে দেখতে পায় এবং তারা সেই ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে ক্লাউডিয়াস নামক একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে ডেকে আনে।
আমাদের নাটকের প্রধান চরিত্র হ্যামলেট যিনি হলেন মৃত রাজা হ্যামলেটের একমাত্র পুত্র। রাজা মারা যাবার পর রাজার স্ত্রী অর্থাৎ প্রিন্স হ্যামলেটের মা গার ট্রুড হ্যামলেট এর চাচাকে বিয়ে করে ফেলে এবং হ্যামলেটের চাচা ক্লাউডিয়াস নিজেকে ডেনমার্কের রাজা হিসেবে ঘোষণা করে।
হ্যামলেটের চাচা তার বাবার শেষকৃত্য সম্পাদনের জন্য হ্যামলেট কে রাজ্যে ডেকে আনে এবং হ্যামলেট এসে দেখতে পান যে তার বাবা মারা গেছে এবং তার মা তার চাচার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এগুলো দেখে তিনি ব্যথিত হয়ে পড়েন।
More: Hamlet’s observation on the frailty of women
এরপরের ঘটনায় দেখানো হয় হ্যামলেট পলোনিয়াসের কন্যা ওফেলিয়াকে প্রেমের প্রস্তাব দেন এবং ওফেলিয়ার ভাই তাকে হ্যামলেটের কাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন।
এর পরের ঘটনায় আবারও সেই প্রেতাত্মার কাহিনী ফিরে আসে। প্রেতাত্মা কে দেখেছিল রাজপ্রাসাদের দুইজন প্রহরী এবং এ সম্পর্কে জানতেন হোরাশি ও নামক এক ব্যক্তি যে কিনা ছিলেন হ্যাবলেটের বন্ধু। হরাশিও এই ঘটনা সম্পর্কে হ্যামলেট কে জানালেন এবং হ্যামলেট তার সাথে রাজপ্রাসাদের গেটে প্রেতাত্মার সাক্ষাৎ পেতে চলে গেলেন। হ্যামলেট প্রেত আত্মাকে দেখে বুঝতে পারলেন যে এটা তার বাবা ওল্ড হ্যামলেট। ওল্ড হ্যামলেট হ্যামলেট কে দেখে একটু আশ্চর্য হলেন এবং তার কাছে বিষয় প্রকাশ করে বললেন যে তার মৃত্যু কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়।
তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তার হত্যাকারী হল ওল্ড হ্যামলেটের ভাই ক্লাউডিয়াস। তিনি হ্যামলেট কে ২ টি দায়িত্ব দিলেন যার একটি হল সে যেন তার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয় এবং অন্যটি হলো সে যেন তার মাকে কোনরকম কষ্ট না দেয়।
Hand Notes: Hamlet
এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে হ্যামলেট একেবারে ভেঙ্গে পড়লেন এবং তিনিই প্রথমে ঠিক করলেন যে আত্মহত্যা করবেন। পরবর্তীতে ভেবে দেখলেন যে খ্রিস্টান ধর্ম মতে আসলে আত্মহত্যা করা মহাপাপ তাই তিনি এই চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলেন।
এরপর তিনি তার বন্ধুকে সাথে নিয়ে পরিকল্পনা করলেন যে আগে তাদেরকে এটা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে যে তার চাচা তার বাবাকে হত্যা করেছে কিনা। এটা তিনি একটা নাটকের মাধ্যমে প্রমাণ করবেন।
এই ঘটনার পর থেকে হ্যামলেটের আচরণ কেমন যেন পাগলের মত হয়ে গিয়েছিল। তবে হ্যামলেট নিজে ইচ্ছে করেই অনেক সময় উন্মাদের মত আচরণ করতেন।
একদিন পাগলের মত আচরণ করতে করতে তিনি ওফেলিয়ার হাত ধরে ফেলেন। তখন ওফেলিয়া তার বাবার কাছে দৌড়ে গিয়ে বলল যে আজকে হ্যামলেটের আচরণ তার ভালো লাগেনি। হ্যামলেটের মাথায় তার টুপি ছিল না এমনকি তার আচার-আচরণ অনেকটা পাগল উন্মাদের মত দেখাচ্ছিল।
ওফেলিয়ার বাবা তখন মনে মনে ভাবল যে হয়তো তার মেয়ে হ্যামলেটের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে প্রেমের শোকে হ্যামলেট পাগল হয়ে গেছে। তিনি এই বিষয়টি রাজ দরবারে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা করলেন।
এরমধ্যেই রাজা রাজ দরবারে একটি নাটকের আয়োজন করলেন আর অন্যদিকে হ্যামলেট পরিকল্পনা করেছিলেন যে তিনি এই নার্কের মাধ্যমে প্রমাণ করবেন যে তার চাচা ক্লাউডিয়াস তার বাবার হত্যাকারী। এজন্য তিনি দুইটি প্লে প্ল্যান করলেন।
একদিন হ্যামলেট এই ব্যাপারটা নিয়ে তার মায়ের কক্ষে আলোচনা করছিলেন এবং তিনি হঠাৎ করে বুঝতে পারলেন যে তাদের এই আলোচনা পর্দার আড়াল থেকে কে যেন শুনছে। তখন তিনি তার তরবারি বের করে পর্দার ওপর চালিয়ে দিলেন এবং দেখতে পেলেন যে ওফেলিয়ার বাবা পলোনিয়াস তরবারি বৃদ্ধ হয়ে মারা গেল।
অফেলিয়ার বাবা মারা যাওয়ার পর রাজ দরবারে একেবারে হইচই পড়ে গেল এবং ওফেলিয়া ও তার ভাই একেবারে পাগল প্রায় হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত অফেলিয়া নিজেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো আর তার ভাই ধন্য হয়ে তাদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রাজ দরবারে উত্তেজনা শুরু করলেন।
Hand Notes: King Lear
তখন ক্লাইডিয়াস তাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে মানালেন যে হ্যামলেট তার বাবা এবং তার বোনের হত্যাকারী। এরপর তিনি প্ল্যান করে হ্যামলেটকে ইংল্যান্ডে নির্বাসনে পাঠালেন এবং সাথে দুইজন গুপ্তচর নিযুক্ত করে দিলেন।
ইংল্যান্ডে যাওয়ার সময় হ্যামলেট তার দুই গুপ্ত চরের সাথে ভাব জমিয়ে ফেললেন এবং হঠাৎ করে তাদের পকেট থেকে একটি চিঠি পেলেন যেখানে ইংল্যান্ডের রাজার উদ্দেশ্যে লেখা ছিল যে হ্যামলেট ইংল্যান্ডে পৌঁছামাত্র তারা যেন হ্যামলেট কে মেরে ফেলে।
হ্যামলেট তখন সেই চিঠি নিয়ে তার নিজের ঘরে চলে আসলো এবং তৎক্ষণাৎ তিনি আরেকটি চিঠি লিখলেন যেখানে বলা হলো ইংল্যান্ডের রাজা যেন হ্যামলেট ইংল্যান্ডে পৌঁছার সাথে সাথে দুই গুপ্তচর কে মেরে ফেলে।
কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিল যখন তাদের জাহাজ জলদস্য কর্তৃক আক্রান্ত হল। আক্রমণ ে হ্যামলেট নিজ ইচ্ছায় জলদর্শীদের জাহাজে চড়ে চলে গেলেন। হ্যামলেটের সুন্দর আচরণের কারণে মুগ্ধ হয়ে জলদস্যুরা তাকে ছেড়ে দিল এবং সে পুনরায় আবার ডেনমারকে ফিরে চলে আসলো।
ক্লাউডিয়াস যখন দেখল যে তাকে নির্বাসনে পাঠানোর পরেও সে ডেনমারকে চলে এসেছে তখন হ্যামলেট কে মারার জন্য আরেকটি প্ল্যান করলো।। রাজা একটি মল্লযুদ্ধের আয়োজন করল যেখানে হ্যামলেট তার প্রতিপক্ষ লেয়ারটিজ এর সাথে লড়বেন। এখানে ষড়যন্ত্র করে রাজা দুইটি তরবারির মধ্যে একটি তরবারিতে বেশ মিশিয়ে দিলেন যেটা দিয়ে যুদ্ধ করবে হ্যামলেটের সাথে লেয়ারটিজ।
আরও প্ল্যান করা হলো যদি লিয়ারটিজ যুদ্ধে জিততে না পারে তবে সে হ্যামলেট কে মদ অফার করবে যে মদের ভেতরে বিশ মেশানো থাকবে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথম রাউন্ডে লেয়ারটিজ হেরে গেল এবং সে হ্যামলেটকে এক গ্লাস মদ অফার করল। কিন্তু হ্যামলেট মদ প্রত্যাখ্যান না করে আরাম করে পুনরায় তার সাথে যুদ্ধ শুরু করল। যখন লেয়ারটিজ এর তরবারির আঘাত হ্যামলেটের শরীরে লাগলো তখন সে বুঝতে পারল যে লেয়াটিজের তরবারিতে বিশ মেশানো রয়েছে।
তাই সে যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় তরবারি বদলের প্রস্তাব দিল এবং ঘটনাক্রমে বিষ মাখানো তরবারি হ্যামলেট এর হাতে চলে আসল। এরপর সেই তরবারি দ্বারা লিয়ারটিজ ও আঘাতপ্রাপ্ত হলো। এ সময় হঠাৎ করে হ্যামলেটের মা গার্ট্রুদ বিশ মেশানো পেয়ালা থেকে মদ পান করল এবং মৃত্যু যন্ত্রণায় ভুগতে লাগলো।
সে সময় সে তার পুত্র হ্যামলেট কে বলল যে এইসব ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে তার চাচা। এই কথা বলে তার মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল এবং হ্যামলেট ক্ষিপ্ত হয়ে বিষ মাখানো তরবারি দিয়ে তার চাচাকে আক্রমণ করে বসলো।
এই পরিস্থিতিতে হ্যামলেট, তার মা, তার চাচা এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী লিয়ারটিজ মৃত্যুবরণ করল। শুধু বেঁচে রইল হোরাশিও ও ফোরটিনবেস নামক আরেকটি চরিত্র। শেষ পর্যন্ত ফোরটিনবেস ডেনমার্কের রাজা হল এবং নির্দেশ দিল যে হ্যামলেটের শেষকৃত্য যেন যথাযথ সম্মানের সহিত করা হয়